রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

যুদ্ধের ক্ষত মুছার আগেই প্রকৃতির আঘাত—বৃষ্টিতে প্লাবিত গাজার আশ্রয়শিবির


মৌসুমের প্রথম ভারি বৃষ্টিতে গাজার অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরগুলো প্লাবিত হয়েছে। হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, ভিজে গেছে তাদের কাপড়, তোষক ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী। সিভিল ডিফেন্স শত শত সাহায্যের আবেদন পেয়েছে, তবে সীমিত সামর্থ্য ও ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যাপ্ত সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না

১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ 

যুদ্ধের ক্ষত মুছার আগেই প্রকৃতির আঘাত—বৃষ্টিতে প্লাবিত গাজার আশ্রয়শিবির
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

মৌসুমের প্রথম বড় ধরনের বৃষ্টিপাতেই ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়েছে গাজা উপত্যকার অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরগুলো। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাতে শুরু হওয়া ভারি বৃষ্টিতে হাজারো বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবু প্লাবিত হয়ে ভিজে গেছে কাপড়, কম্বল ও তোষকসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী।

গাজার একটি শিবিরে পানি সরানোর চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত নিভেন আবু জ্রেইনা জানান, সকাল থেকে তাঁবুর বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। “বৃষ্টির পানিতে আমাদের সব কাপড়, এমনকি তোষকটাও ভিজে গেছে,” বলেন তিনি।

গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, কয়েক হাজার মানুষ অস্থায়ী তাঁবুতে থাকছে, কিন্তু ভারি বৃষ্টির কারণে সেগুলোতে ব্যাপক পানি ঢুকেছে। শনিবার ভোর থেকেই সংস্থাটি শত শত সাহায্যের আবেদন পেয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, "যাদের তাঁবু নষ্ট হয়েছে, তাদের সবার জন্য পর্যাপ্ত নতুন তাঁবু আমাদের কাছে নেই।"

গাজা উপত্যকায় শরতের শেষ ও শীতকালে সাধারণত বৃষ্টি বেশি হয়। কিন্তু মানবিক পণ্য সরবরাহে ইসরায়েলি বিধিনিষেধের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের ব্যবহৃত তাঁবুগুলো বৃষ্টির মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্পূর্ণ অক্ষম। এমনকি একটি তাঁবু স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ‘টেন্ট পোল’ পর্যন্ত গাজায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজার ৯২ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত, ফলে আশ্রয়ের সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

শনিবারের বৃষ্টিতে গাজার বহু নিচু এলাকা হাঁটু–সমান পানিতে ডুবে গেছে। শিশুদের গোড়ালি সমান জল পেরিয়ে হাঁটাচলা করতে দেখা গেছে।

বাস্তুচ্যুতদের নিয়ে কাজ করা ইনাম আল-বাট্রিখি বলেন, “নারীরা যখন সাহায্যের জন্য আমার কাছে আসে, নিজেকে অসহায় মনে হয়। আমিও তো আমার নিজের তাঁবুতেও পানি ঢুকছে।”

আরেক বাস্তুচ্যুত নারী নুরা আবু এল-কাশ বলেন, “আজকের বৃষ্টিতে আমার তোষক, কম্বল, কাপড় সব ভিজে গেছে। এই জায়গা আমাদের রক্ষা করতে পারছে না। এখন আমি কী করব?”

গাজায় রাতের তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করে—কিন্তু যথেষ্ট আশ্রয়, খাবার ও উষ্ণতার অভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য এটি নেমে আসে অসহনীয় কষ্টে।