উপকূলের শিশুদের দুর্যোগের আগাম পূর্বাভাসভিত্তিক জ্ঞান বৃদ্ধির লক্ষ্যে মেট ক্লাব উদ্বোধন
১৫ নভেম্বর ২০২৫, ৫:৫২ অপরাহ্ণ
শিশু শব্দটার সঙ্গে নিস্পাপ, ভালোবাসা, আদর, মমতা ইত্যাদি শব্দের মিশেল। সেই শিশুদের পথশিশু, টোকাই, রাস্তার ছেলে ইত্যাদি নামে সম্বোধন বেদনাদায়ক। সে রাস্তায় থাকে বলে তাকে পথশিশু বলতে হবে? আর কোনো শব্দ নেই? থাকতে পারে না? একশ্রেণির অশিক্ষিত ও দরিদ্র মানুষের অন্যায় বা অপরিকল্পিত জন্মদানের ফল পথশিশু। অবহেলায় জন্ম নেওয়া এই শিশুদের বেড়ে ওঠাও অবহেলায়। আজ যে ছোট ছোট বাচ্চা রাস্তায় পত্রিকা বিক্রি করে, ফুল বিক্রি করে কিংবা কিছু খাবে বলে টাকা চায় তাদের ভবিষ্যত কি? যে বয়সে তাদের হাতে থাকা উচিৎ বই-খাতা সে বয়সে তাদের হাতে প্লাস্টিকের বস্তা। রাস্তায় রাস্তায় তারা প্লাস্টিক খুঁজে। কী নির্মম বেদনাময় দৃশ্য!
সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পথশিশুদের বেশিরভাগই নানা রোগে আক্রান্ত। ৮২ শতাংশই ভোগে পেটের অসুখে। এর জন্য প্রধান কারণ অস্বাস্থ্যকর খাবার। পাশাপাশি নোংরা পরিবেশে থাকার কারণে এদের চর্মরোগের হারও বেশি। রয়েছে নানা ধরনের সংক্রামক রোগও।
২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ, যার মধ্যে আড়াই লাখের বেশিই ছিল রাজধানীতে। বর্তমানে বাংলাদেশে পথ শিশুর সংখ্যা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। কেউ বলেন ২১ লাখ। আবার কেউ বলেন ২৪ লাখ। তবে এদের মধ্যে ৫০ হাজার শিশু আক্ষরিক অর্থেই রাস্তায় থাকে।
ঢাকাসহ সারাদেশে পথশিশুদের নিয়ে অনেক বেসরকারি সংগঠন কাজ করে। কেউ খাবার দেয়। কেউ পোশাক দেয়। কেউ দেয় শিক্ষা। কেউ আবার তাদের বিনোদনের ব্যবস্থাও করে। তবে দিনশেষে তাদের পথেই ফিরে যেতে হয়। তাদের পুরোপুরি পুনর্বাসনের জন্য খুব বেশি উদ্যোগ নেই। আসলে তাদের দরকার স্থায়ী পুনর্বাসন।
শিশু জন্মাবে শিশুর মতো। বেড়ে উঠবে শিশুর মতো। উন্নত দেশগুলোয় দেখা যায়, প্রত্যেক শিশুর দায়িত্ব রাষ্ট্র কোনো না কোনোভাবে পালন করে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও এটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। রাষ্ট্রযন্ত্র পথশিশুদের সর্স্পক অসচেতন। ফুটপাত, পার্ক, ট্রেন ও বাসস্টেশন, লঞ্চঘাট, সরকারি ভবনের নিচে বসবাসকারী এসব পথশিশুকে দেখার কেউ নেই। অবহেলা, অনাদরে, খেয়ে না–খেয়ে তাদের দিন কাটে। তারা মাদকাসক্ত হচ্ছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক শিশু সনদ, শিশু আইনসহ দেশের প্রচলিত আইনে প্রতিটি শিশু তাদের সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশ লাভের জন্য শিক্ষা, খেলাধুলা, খাদ্য ও পুষ্টি, বিনোদন পাওয়ার অধিকার রাখে। শিশুদের সব ধরনের নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে আত্মরক্ষার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে এসব সনদ ও আইনে । কিন্তু দেশের পথশিশুরা এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত। সরকারকে এখন এসব পথশিশুর কথা নতুন করে ভাবতে হবে। শিশুরা যাতে আর পথে বসবাস না করে, তার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
শুধু দারিদ্র্য দূরীকরণের মাধ্যমে শিশুদের পথে জীবন যাপন করা থামানো যাবে না। সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ বাড়াতে হবে। দৃঢ় করতে হবে পারিবারিক বন্ধন । শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় তার পরিবার। কিন্তু সেই পরিবারে অবহেলা-নির্যাতন চললে অবশিষ্ট কী থাকে?
লেখক: এস এস এম ফয়েজ
সিনিয়র সাংবাদিক