রাজবাড়ী বিআরটিএ: দালালের দৌরাত্ম্যে ঘুষ-দুর্নীতির আখড়া
৫ দিন আগে
২১ অক্টোবর ২০২৫, ৫:০৭ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ঢাকা মেট্রো সার্কেল–৪ (পূর্বাঞ্চল)-এর উচ্চমান সহকারী হারুন ইসলাম ওরফে হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে লাগামহীন ঘুষ বাণিজ্য ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিভিন্ন অপকর্মের হোতা হিসেবে পরিচিত এই কর্মকর্তার বিলাসবহুল জীবনযাপন ও সম্পদের পাহাড় গড়ার বিষয়টি এখন প্রকাশ্যে।
ভুক্তভোগী গ্রাহক ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, উচ্চমান সহকারী হারুন ইসলাম বিআরটিএ-তে ঘুষ বাণিজ্যকে নিত্যদিনের কাজে পরিণত করেছেন এবং সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। তিনি সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় আলিশান ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও ‘রহস্যময় হাসি’র আড়ালে দুর্নীতি
সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের মতে, হারুন ইসলামের মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকে, তবে এই হাসির আড়ালে রয়েছে 'রহস্যময় জাদু' যা দিয়ে তিনি অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেন। অভিযোগ রয়েছে, চাকরির শুরু থেকে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন।
আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, গত প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি আওয়ামী লীগের অত্যন্ত আলোচিত আমলা ‘ডিবি হারুনের’ আত্মীয় পরিচয় দিয়ে মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। এমন একাধিক অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলে জানা গেছে।
কর্মকর্তাদের 'ক্যাশিয়ার' হিসেবে কাজ করার অভিযোগ
বর্তমান কর্মস্থল মেট্রো সার্কেল–৪ বিআরটিএ-তেও হারুন ইসলামের পুরানো অপকর্মের ধারা অব্যাহত আছে। তিনি সেখানকার সহকারী পরিচালক মো. এমরান খান, সহকারী পরিচালক মো. আলী আহসান মিলন, মোটরযান পরিদর্শক মো. আলমগীর শেখ, মোটরযান পরিদর্শক অসীম পাল ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. এরশাদ মিয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে কাজ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তিনি এই কর্মকর্তাদের 'ম্যানেজ' করে একাধিক দালালের মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে যানবাহনের সকল কাজ সম্পন্ন করে দিচ্ছেন।
ভুক্তভোগীদের বক্তব্য: "আমরা কাজ নিয়ে অফিসে গেলে কর্মকর্তারা নানা ধরনের তালবাহানা শুরু করেন। কাগজের সমস্যা দেখিয়ে ঘুরিয়ে দেন। কিন্তু তাদেরই নিয়োজিত দালালদের (জীকু, জাহাঙ্গীর, মোহাম্মদ হারুন, মনির, শাহাদাত, সুলতান-সহ অনেকে, যারা 'গেটিস' নামে পরিচিত) কাছে গেলেই আর কোনো সমস্যা থাকে না। অর্থের বিনিময়ে তাৎক্ষণিক কাজ হয়ে যায়। এভাবেই চলছে পূর্বাচল বিআরটিএ-এর দুর্নীতি ও অনিয়ম।"
বিলাসিতা ও সম্পদের উৎস
অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে উচ্চমান সহকারী হারুন ইসলাম সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় ৪২৯/এ নম্বর ভবনে ২,০০০ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট ক্রয় করে বসবাস করছেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
পূর্বে মিরপুর ১৩ নম্বর বিআরটিএ-এর ১১৪ নম্বর কক্ষে দায়িত্ব থাকাকালীনও তিনি দালাল নিয়ন্ত্রণ করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সে সময় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল, যার ফলস্বরূপ তাকে সিলেট মেট্রো সার্কেলে বদলি করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পুনরায় তিনি ঢাকা মেট্রো সার্কেল–৪ এ বদলি হয়ে আসেন।
সিলেটে কর্মরত থাকাকালীনও একজন উচ্চমান সহকারী হয়েও তার নিয়মিত বিমানে যাতায়াত করার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। এমন উচ্চাভিলাষী জীবনযাপন একজন উচ্চমান সহকারীর পক্ষে কীভাবে সম্ভব, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
কর্তৃপক্ষের নীরবতা ও প্রতিক্রিয়ার অভাব
এ ব্যাপারে উচ্চমান সহকারী হারুন ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি বারবার ফোন রিসিভ না করে কেটে দেন।
মিরপুর বিআরটিএ-এর কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, একজন উচ্চমান সহকারী হিসেবে চাকরি করে তার এত অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়া নিয়ে তাদেরও সন্দেহ রয়েছে এবং টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
অভিযোগকারীদের প্রত্যাশা ও দাবি হলো, উচ্চমান সহকারী হারুন ইসলামের বিরুদ্ধে অবিলম্বে যথাযথ তদন্ত করে তার অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হোক এবং তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হোক।