তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলে রাইজিং স্টারস এশিয়া কাপে বাংলাদেশ স্কোয়াড ঘোষণা
২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২২ পূর্বাহ্ণ
বর্তমান বিশ্ব অনেক আধুনিক ও স্মার্ট। কিন্তু দেশে দেশে এই আধুনিক ও স্মার্ট এর সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্টের মহোৎসব। আধুনিক নগরায়নের সুবিধার্থে বিশ্বব্যাপী মানুষ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বনজঙ্গল উজাড় করে একদিকে যেমন তৈরি করছে বিশাল বিশাল অট্টালিকা অন্যদিকে যত্রতত্র কলকারখানা স্থাপন যা কখনো কোন ভাবে কাম্য হতে পারে না? তাছাড়া দেশ জুড়ে ইঞ্জিনচালিত গাড়ির ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। আর এসবের ফলে পরিবেশের উপর এর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে ব্যাপক হারে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গত দুই দশকে বাংলাদেশে ১৮৫টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছে।
আজকের প্রসঙ্গের আজকের আলোচনায় থাকছে জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের কি কি করতে হবে এই নিয়ে বিস্তারিত। চলুন তবে নিচের আলোচনায় মনোনিবেশ করি এবং জলবায়ু পরিবর্তনে একতাবদ্দ হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি।
এই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। দিন দিন জলবায়ুর পরিবর্তন জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলায় তা আমাদের চিন্তার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভূ-পৃষ্ঠের কোনো স্থানের ২৫-৩০ বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থাকে ওই স্থানের জলবায়ু বলা হয়। এটি মূলত কোনো স্থানের দীর্ঘদিনের বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, রৌদ্রালোক ইত্যাদির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। প্রাকৃতিক (পৃথিবীর বিভিন্ন গতিশীল প্রক্রিয়া, সৌর বিকিরণের মাত্রা, অক্ষরেখার দিক পরিবর্তন, সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর অবস্থান ইত্যাদি) নানা কারণে জলবায়ু স্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন হলেও মূলত মানবসৃষ্ট (কলকারখানা, যানবাহন থেকে নির্গত গ্যাস, কয়লা পোড়ানো, ইটভাটার ধোঁয়া, গাছ কাটা ইত্যাদি) কারণেই জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।
বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাপমাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। মানবসৃষ্ট এ গ্রিনহাউস গ্যাসের ফলে পৃথিবীর উষ্ণয়নকে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অন্যতম কারণ মনে করা হয়। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর এ পরিবর্তন পরিবেশ ও মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, দুই মেরুর বরফ গলার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চতা বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের। সমুদ্রপৃষ্ঠের সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে দেখা দিচ্ছে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও পাহাড়ধসের মতো দুর্যোগ।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। আর তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, জলবাযু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব থেকে আগামী প্রজন্মকে সুস্থ সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের যা যা করতে হবেঃ-
১) বৃক্ষ নিধন রোধ ও বেশি বেশি গাছ লাগানো: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি তা হলো অক্সিজেন। আর গাছ থেকে আমরা সেটি অনায়াসেই পাই। বর্তমানে ক্রমবর্ধমানহারে গাছ কাটার উৎসব চলছে। ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত গাছ লাগানো। বাড়ির চারদিকে, রাস্তার পাশে, রেললাইনের দুই ধারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাছ লাগাতে হবে। বনাঞ্চল ধ্বংস করা যাবে না।
২) জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো: জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস) এর ব্যবহার কমাতে হবে। এটি অত্যন্ত দূষণকারী যা কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে, যা জলবায়ু পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৩) ইঞ্জিনচালিত গাড়ির ব্যবহার কমানো: যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে ইঞ্জিনচালিত গাড়ির ব্যবহার কমানোর। কেননা তা থেকে প্রচুর কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস বের হয়, যা মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিকল্প হিসেবে বৈদ্যুতিক/ব্যাটারিচালিত গাড়ি, বাইসাইকেল ইত্যাদি ব্যবহার করা।
৪) রিসাইকেল করা: পরিবেশ রক্ষায় রাসায়নিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করা জিনিসকে যেখানে সেখানে না ফেলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা ও তা পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলা।
৫) জনসচেতনতা সৃষ্টি: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ, প্রভাব ও করণীয় দিকগুলো নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত সভা, সেমিনার আয়োজন করতে হবে। সবার মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনে সবাই কে নিজ নিজ এলাকায় জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। তবে কেবল মাত্র মুখে নয় কাজে প্রমান করতে হবে। আসুন একটি সুন্দর পৃথিবী নির্মাণে সকলে এক হয়ে কাজ করি ।