বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫

ইটভাটার মাটিবাহী ট্রাকের দখলে মহাসড়ক ও গ্ৰামীন সড়ক


১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৪:১৭ অপরাহ্ণ 

ইটভাটার মাটিবাহী ট্রাকের দখলে মহাসড়ক ও গ্ৰামীন সড়ক
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

রাজবাড়ী জেলা মহাসড়ক-আঞ্চলিক সড়ক এখন ইট ভাঁটাতে নিয়োজিত মাটিবাহী ড্রাম ট্রাকের দখলে। এ সকল মাটিবাহী ড্রাম ট্রাকগুলো সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত অবাদে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে মাটি নিয়ে ইট ভাঁটাতে আসা-যাওয়া করছে। এতে সড়কগুলো এখন মৃত্যু ফাঁদে রূপান্তরিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বায়ু দূষণ জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকাবাসী।

বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, জেলায় অপরিকল্পিত প্রায় শতাধিক ইটভাঁটা গড়ে উঠেছে। এ সকল ইট ভাঁটাতে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার ড্রাম ট্রাক মাটি যাচ্ছে। আঞ্চলিক পাকা সড়কগুলো দখল করে ইট ভাঁটার মাটি ভরাট করে রেখে দেওয়া হয়েছে। এই সকল জনপদ দিয়ে এখন কোনো মানুষ স্বাভাবিক চলাচল করতে পারে না। অবৈধ ইট ভাঁটার চতুর পাশে বসতি ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে পারছে না। 

ভয়ে ইট ভাঁটার মালিকদের বিপক্ষের কথাও বলতে পারছেন না। গোয়ালন্দ উপজেলা ও রাজবাড়ী সদর উপজেলা সীমান্তবর্তী খানখানাপুর, ভাগলপুর ঘনবসতি এলাকায় হাফ ১ কিলোমিটার এলাকায় ৬টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এই ইট ভাঁটাগুলোর মাঝ দিয়ে আঞ্চলিক একটি পাকা সড়ক ও একটি ব্রিজ রয়েছে।

তবে সরেজমিনে গিয়ে পাকা রাস্তা ও সড়কের কোনো চিহ্ন দেখা মেলে না। ধুলায় ঢেকে আছে। এই সড়ক দিয়ে রিক্সা, ভ্যান, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, অটোরিক্সা ও পায়ে হেঁটে স্বাভাবিক চলাচল করলে ধূলায় নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না। আশপাশে কোনো কৃষক ফসল ফলাতে পারছেন না। এলাকাবাসী অভিযোগ, এই রাস্তা দিয়ে মানুষ হেঁটে যেতে পারে না। তাহলে আমরা বসবাস করব কিভাবে। প্রতিদিন বিছানায় ধূলার আবরণে ঢাকা পরে যায়। জানালা খুলা রাখলে সারা ঘর ধুলায় ভরে যায়। খাবারের সঙ্গে ধুলা মিশে যাচ্ছে। এ যেন অসহ্য যন্ত্রণা।

এ সময় আসমা বেগম নামের নারী বলেন, ঘরে জানালা কখনো খুলতে পারি না। রান্নাঘরে দরজা খুলে রান্না করতে পারি না। ঘরের বাহিরে কাপড় শুকাতে পারি না। ঘরের পাশে রাস্তায় একটু দাঁড়াতে পারি না। শুধু ধুলা আর ধুলা। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই অভিযোগ আমরা কারও কাছে দিতেও পারি না। অভিযোগ দিলে এই এলাকায় বসবাস করতে পারব না।

কুরমান মোল্লা নামের এক ব্যক্তি বলেন, এই রাস্তা দিয়ে ধুলার কারণেরোগে আক্রান্ত এলাকাবাসী যেতে পারে না। বৃষ্টি থাকলে কাঁদার কারণে যেতে পারে না। শুধু দিনের আলোতে নয়, রাতেও মন খুলে রাস্তায় আসতে পারি না ধুলার কারণে। অভিযোগের কথা বলতে তিনি বলেন, অভিযোগ করলে বাড়ি রেখে পালাতে হবে।

সুবর্না নামের এক স্কুল শিক্ষার্থী বলেন, পরিষ্কার জামা-কাপড় পরে আসলেও স্কুলে যেতে পারি না। শুধু ধূলা নয় এই রাস্তায় ধূলা বা বৃষ্টিতে কাদার কারণে প্রতিনিয়ত ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ইট ভাঁটার কারণে এই সড়কগুলো এখন মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত ডা. শরিফুল ইসলাম বলেন, বায়ু দূষণের কারণে মানুষ অ্যাজমা (হাঁপানি), ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি রোগ (সিওপিডি) এবং ফুসফুসের ক্যান্সারসহ অনেক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বাতাসে সাধারণত অক্সিজেন থাকে ২১ ভাগ। যদি কোনো কারণে এর ঘাটতি হয়ে অন্যসব গ্যাসের ঘনত্ব বা বালুকণার ভাগ বেড়ে যায়, তবে তাকে দূষিত বায়ু বলা হয়। বায়ু দূষণ থেকে হাঁপানি, হাঁপানি একটি প্রদাহজনিত অবস্থা। এতে কিছু উদ্দীপক শ্বাসনালিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে সাময়িকভাবে তা সরু করে দেয়। ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, এই পাকা রাস্তা দেখে মনে হচ্ছে মাটির রাস্তা। যাদের কারণে সরকারি পাকা রাস্তার এখন অবস্থা তাদের তালিকা তৈরি করে আইনের আওতায় আনা হবে। পাকা রাস্তা আটকিয়ে ইট ভাঁটার মাটি রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ব্যক্তি স্বার্থে রাস্তা দখল করার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান।