শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তি আজ


২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ 

পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তি আজ
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তি আজ। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে শান্তিবাহিনীর দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের সংগ্রামের। পার্বত্য শান্তিচুক্তির ফলে পাহাড়ে ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও পুরোপুরি ফিরে আসেনি শান্তি, বাস্তবায়ন হয়নি অধিকাংশ চুক্তির ধারা, নিরসন হয়নি সংঘাত সংঘর্ষ, কাটেনি ভূমি জটিলতা, অব্যাহত রয়েছে খুন-গুম, অপহরণ-চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনমান।

দিবসটি পালনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও খাগড়াছড়ি রিজিয়ন দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। কর্মসূচিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সরকারি গণগ্রন্থাগারে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন, বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনা সভা, রোড শো, ব্যানার-ফেস্টুন-ডিজিটাল ডিসপ্লে, চুক্তি পরবর্তী সময়ে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় নানা উন্নয়নবিষয়ক প্রচার-প্রচারণা, নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে আলোকসজ্জা ও ফানুস ওড়ানো এবং বিকালে খাগড়াছড়ি ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে পার্বত্য চুক্তির ফলে পুরোপুরি শান্তি না মিললেও বদলে গেছে পাহাড়ের দৃশ্য। দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের সংঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষে তৎকালীন চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লার সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে, উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।

এককালের দুর্দান্ত প্রতাপশালী শান্তি বাহিনীর গেরিলাদের গায়ে শোভা পাচ্ছে পুলিশের পোশাক। চুক্তির ফলে স্বাভাবিকতা ফিরে আসায় দূর পাহাড়ের বুকচিরে রাত-দিন ছুটছে যানবাহন। এক সময় জেলার বাইরের অন্য জেলার সঙ্গে ৩টার পর যোগাযোগ করার মতো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। বর্তমান পাহাড়ের পর্যটন স্পট সাজেক ছিল আতঙ্কিত ও বিচ্ছিন্ন। যোগাযোগ ছিল নিষিদ্ধ। চুক্তির ফলে সেই সাজেক পর্যটন স্পট আজ পাহাড় ছেড়ে বাংলাদেশের সর্বত্র সুনাম ছড়িয়েছে। গড়ে উঠেছে বড় বড় হোটেল-রেস্তোরাঁ। প্রতিনিয়ত আসছে হাজার হাজার পর্যটক।

শান্তিচুক্তির ফলে প্রাথমিকভাবে শান্তি বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। সরকার তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। দিবসটি উপলক্ষে আলাদা আলাদা বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেছেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিশ্বে একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘদিনের জাতিগত হানাহানি বন্ধ হয়। অনগ্রসর ও অনুন্নত পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়নের ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে গত ২৬ বছরে খাগড়াছড়িতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। জেলাবাসীর বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ঠাকুরছড়া, ২০১ কেভি পাওয়ার গ্রিড নির্মাণ করা হয়েছে। সরকার দুর্গম এলাকায় যেখানে অন্ধকার ছিল সেখানে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে সব মানুষকে আলোর মুখ দেখিয়েছে, ১০ হাজার পরিবারকে সৌর বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান আরও ৪০ হাজার পরিবারকে বিদ্যুতের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে পার্বত্য তিন জেলার ২৬টি উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি ৪৪টি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এক সময় ৫০ কিলোমিটার সড়ক যোগাযোগ ছিল। এখন তা ১ হাজার কিলোমিটার হয়েছে। হাসপাতালসহ সাধারণ মানুষের উন্নয়নে দুর্গম পাহাড়ি জনপদে সরকারের উন্নয়নের ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। এদিকে বাঙালি নেতারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চলছে, সে কারণেই চুক্তির দীর্ঘ ২৬ বছরেও বন্ধ হয়নি গুম, খুন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ভূমি জটিলতা।

খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুজন চাকমা বলেন পাহাড়ে শান্তিচুক্তি করা হলেও চুক্তির সুফল ভোগ করছে এখানকার বাঙ্গালীরা তাদের কোথাও চলাচল বা কাজ করতে বাধা নেই, কিন্তু উপজাতিদের ক্ষেত্রে অনেক বাধা রয়েছে ইচ্ছা করলেই তারা তাদের মতো করে চলাচল বা কাজ করতে পারে না কারণ চুক্তির ফলে এখানে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে কয়েকটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে বেড়েছে চাঁদাবাজি এতে করে সাধারণ উপজাতিরা দিশাহারা হয়ে পড়েছে।

এদিকে সরকার পক্ষ বলছে, চুক্তির অধিকাংশ ধারাই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, শান্তিচুক্তির কারণেই পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাহাড়ের মানুষ উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে। সহিংসতা দূর করতে হলে সংবিধানের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন এবং স্থানীয় সব শ্রেণির জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।