ফরিদপুরে অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশনের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত
রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪
২৪ নভেম্বর ২০২৩, ৯:৪৮ অপরাহ্ণ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন স্ত্রীর অস্ত্রোপচারের জন্য টাকা তুলতে একটি বেসরকারি ব্যাংকের বুথে যান আতাউর রহমান (৬০) নামের এক ব্যাক্তি। সেখানে আগে থেকেই একজন অপরিচিত ব্যক্তি ছিলেন। বুথে এটিএম কার্ড প্রবেশ করিয়ে টাকা তুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন আতাউর। সাহায্য করার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে এটিএম কার্ড নেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই আতাউরকে একই রঙের অন্য আরেকটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে কৌশলে গোপন নম্বর (পিন) জেনে সটকে পড়েন প্রতারক। তবে কিছু সময় পার হতে না হতেই আতাউর রহমানের মুঠোফোনে এক লাখ টাকা তুলে নেওয়ার বার্তা আসে। নিজের একাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেয়ার এমন বার্তা দেখে তিনি অবাক হলেন।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়লের টিএসসি এলাকার একটি বুথে টাকা তুলতে গিয়ে একই ধরনের সমস্যায় পড়েন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক উম্মে আতিয়া। তাঁকেও সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন আগে থেকে এটিএম বুথের ভেতরে থাকা এক ব্যক্তি। টাকা তুলতে সাহায্য করার কথা বলে তাঁর কার্ড অদলবদল করে সেখান থেকে পালিয়ে যায় প্রতারক চক্রের সদস্য। কিন্তু চিকিৎসক উম্মে আতিয়া কিছুই আঁচ করতে পারেননি। তিনি টাকা তুলতে না পেরে বুথ থেকে ফিরে আসেন। কিছুক্ষণ পরে মুঠোফোনে ৫০ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার বার্তা আসে। পরে উম্মে আতিয়া বিষয়টি ব্যাংক ও পুলিশকে জানান।
আর এই ঘটনা দুটি তদন্ত করতে গিয়ে শহিদুল ইসলাম ও মামুন মাতুব্বর নামের দুজনকে শনাক্ত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। ঢাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে গতকাল তাঁদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবি জানায়, শহিদুল ও মামুনই ওই দুই ঘটনায় এটিএম কার্ড হাতিয়ে নিয়ে টাকা তুলে নিয়েছিলেন। এটিএম বুথগুলোর সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা ২০১৫ সাল থেকে এভাবে মানুষের এটিএম কার্ড নিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। এক্ষেত্রে তাঁরা নারী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু বানাতেন। দিনে যখন বুথের নিরাপত্তাকর্মীরা খাবার খেতে যান, তখন বুথে ঢুকে লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা করেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বুথের নিরাপত্তাকর্মীদের টাকা দিয়ে এ কাজ করতেন।
এ বিষয়ে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশীদ বলেন, টাকা তুলতে কোনো ব্যক্তি এটিএম বুথে প্রবেশ করার আগে শহিদুল বুথে ' মোবাইল ব্যাংকিং অপশন ' চালু করে রাখতেন। যেসব ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা আছে, সেগুলোতেই শুধু এই অপশন চালু রাখা যায়। শহিদুল অপশনটি চালু রাখায় গ্রাহক কার্ড বুথে প্রবেশের চেষ্টা করলে তা ফিরে আসত। তখন শহিদুল টাকা তুলতে সাহায্য করার কথা বলে গ্রাহকের কার্ড নিয়ে নিজের কাছে থাকা একই ধরনের কার্ড গ্রাহককে দিতেন। কৌশলে কার্ডের পিন নম্বরও জেনে নিতেন। পরে গ্রাহকের কার্ড দিয়ে টাকা তুলে নিতেন শহিদুল।
ডিবি সূত্র জানায়, শহিদুল প্রতারণার ঘটনায় আগেও চারবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও একই অপরাধে জড়িয়েছেন তিনি। শুধু ঢাকায় নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তিনি এই প্রতারণা করেন। এভাবে প্রতি মাসে পাঁচ থেকে ছয়টি প্রতারণা করেন। তা থেকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আসত তার।
ডিবি কর্মকর্তাদের তথ্য মতে, শহিদুল এসএসসি পাস করে একসময় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। একপর্যায়ে নিজেই এটিএম প্রতারণার এই কৌশল শেখেন। পরে পোশাক কারখানার চাকরি ছেড়ে দিয়ে একটি চক্র গড়ে তোলেন। তিনি যখন বুথের ভেতরে থাকেন, বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে কে বুথে প্রবেশ করছেন, সেই তথ্য তাঁকে দেন মামুন। অষ্টম শ্রেণি পাস মামুন এক সময় চা বিক্রি করতেন। শহিদুলের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর এই চক্রে জড়ান তিনি।