ফরিদপুরে অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশনের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত
রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২:৪০ অপরাহ্ণ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় বলেছেন, 'আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব, এই কারণে আজকে এখানে সমাবেশ। আপনাদের আমরা আমন্ত্রণ জানাতে এসেছি। ঢাকা শহরসহ সারা দেশে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করব, যেন সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সেই দিনের জন্য আপনারা প্রস্তুতি নিন।
কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় 'সরকার পতনের এক দফা দাবিতে' বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে হলে খালেদা জিয়ার মুক্তি দরকার মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, 'আমার ভাইয়েরা, মায়েরা, বোনেরা, যারা বাড়ি থেকে শুনছেন, আপনারা কেউ ঘরে বসে থাকবেন না। যদি ঘরে বসে থাকেন, তাহলে কিছুই হবে না। যদি আপনারা অংশগ্রহণ না করেন, তাহলে এই শেখ হাসিনা সরকারকে কখনোই ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না। তাদের হাতে পুলিশ আছে, তাদের হাতে বিডিআর আছে, তাদের হাতে র?্যাব আছে, তাদের হাতে কোর্ট আছে। সুতরাং, আমরা সব কিছু ছাপিয়ে, সব কিছুকে প্রতিরোধ করে দেশকে মুক্তির আলো দেখাব এক দিন।'
আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ভয় কেন, সেই প্রশ্ন তুলে মির্জা আব্বাস বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তারা আরেকটা কথা কী বলে জানেন, এক রাতে আওয়ামী লীগ শেষ হয়ে যাবে। আমরা তো লাঠি, দা, কাচি নিয়ে বসে নেই। আমরা দেশকে মুক্ত করতে চাই আপনাদের হাত থেকে।'
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন- বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম। ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে এবং বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইরফান ইবনে আমান প্রমুখ।
এদিকে মঙ্গলবার গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী কলেজগেট এলাকায় একই দাবিতে মহানগর বিএনপি সমাবেশ করে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। আন্দোলন সংগ্রামের জন্য বিএনপি আর প্রশাসনের অনুমতির অপেক্ষা করবে না জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, 'আমাদের আন্দোলন ডু অর ডাই। হয় বাঁচব না হয় মরে যাব। শেখ হাসিনার অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে বাঁচতে একদম চাই না। তাই আমাদের সে জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত করে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করতে পারব। আমরা লড়ছি জনগণের জন্য। জনগণ পাশে থাকবে। আমাদের পুলিশ, এসপি, থানা কিছুই লাগবে না।'
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, জেলা বিএনপি সভাপতি ফজলুল হক মিলনসহ স্থানীয় নেতারা।
সমাবেশে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, এখন আন্দোলন হচ্ছে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের আন্দোলন। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে যারা রয়েছেন, তারা একটি লক্ষ্যে আন্দোলন করছেন, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা সরকারের পতন, স্বৈরাচার পতন। কেউ পিছিয়ে যাওয়ার জন্য আজকে প্রস্তুত নয়। জীবনের বিনিময় বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সঙ্গে জনগণ, তাদের সঙ্গে কেউ নেই। বাংলাদেশের মানুষও নেই, বিদেশিরাও নেই। 'মানুষ আর ভোট চোরদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না'
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে ভোট চোর, ফ্যাসিস্ট ও অবৈধ আখ্যা দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেছেন, মানুষ আর এই ভোট চোরদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে ও রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খানের পরিচালনায় এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদউলস্নাহ কায়সার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমনসহ গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকার দেশ চালাতে পারছে না। একটি ডেঙ্গু মশা মারতে পারছে না। যে সরকার একটি ডেঙ্গু মশা মারতে পারে না, সেই সরকার কীভাবে দেশ চালাবে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সরকার ডিম-পেঁয়াজ-চিনি-আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাজার সিন্ডিকেট সেটি মানছে না। অর্থাৎ, সরকারের থেকে সিন্ডিকেটের ক্ষমতা বেশি। তিনি আরও বলেন, এই সরকারের মন্ত্রীরা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বেহেস্তে আছে। যেখানে মানুষ জাহান্নামে আছে। এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। এই সরকারের বিরুদ্ধে সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে অবস্থান নিয়েছে। নৌকা যত ডুববে, তাদের শরিক দলগুলোও পক্ষ পরিবর্তন করবে। মানুষ আর এই ভোট চোরদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আজকে যে পরিস্থিতি, বাজারে আগুন জ্বলছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারবেন না। আবার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনো সিন্ডিকেট নেই। মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। জনগণ শিগগিরই রাজপথে নেমে তাদের ক্ষমতা থেকে টেনে নামবে। ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, এই সরকার আবার এক তরফা নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। কিন্তু এক তরফা নির্বাচন আর বাংলাদেশের মাটিতে হবে না। বুকের রক্ত দিয়ে হলেও আপনাদের (আওয়ামী লীগ) এক তরফা নির্বাচন প্রতিহত করা হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন বলেন, আজকের এই ফ্যাসিবাদী শাসক, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ব্যবসায়ীরা মিলে যে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে, দেশের মানুষ তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। জনগণ এই লুটপাটের সিন্ডিকেট ভেঙে ফ্যাসিবাদী শাসকের পতন ঘটানো ছাড়া ঘরে ফিরে যাবে না। এই অবৈধ শাসকের দিন শেষ। এখনো সময় আছে, জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন। সমাবেশ শেষে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা একই দাবিতে গণমিছিল বের করেন। মিছিলটি মতিঝিল থেকে শুরু হয়ে টিকাটুলির হাটখোলায় গিয়ে সমাপ্তি হয়।