
বগুড়ায় ফ্রিল্যান্সারকে অপহরনের দায়ে সাব-ইন্সেপেক্টরসহ পুলিশ আটক
২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৮:০২ অপরাহ্ণ
প্রিয় পাঠক একজন দুবাই প্রবাসী বাংলাদেশি "আজকের প্রসঙ্গ'কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, উনার প্রবাস জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। আপনাদের বুঝার সুবিধার্থে কথাগুলো হুবহু তুলে ধরেছি।
প্রবাস বলতে পরদেশ বা বিদেশ, সাধারনত এটাই বুজে থাকি । কিন্তু একজন প্রবাসীর কাছে প্রবাস মানে,পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজন বিহীন বছরের পর বছর একা একা কাটিয়ে দেয়া। প্রবাস মানে শত দুঃখ কষ্টের সঙ্গে বিরামহীনভাবে অর্থের পেছনে ছুটে চলা এক জীবনের নাম। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় জীবিকার তাগিদে কারো ছেলে, কারো ভাই, কারো বাবা, কারো স্বামী অন্যের সুখের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে ভিনদেশে পাড়ি জমায়। এই দেশান্তরী হওয়া মানুষগুলোর সুন্দর একটি নাম রাখা হয়েছে প্রবাসী। যাদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা অর্থাৎ রেমিটেন্স বাংলাদেশের আয়ের (একটা বড় অংশ) যা দেশের মূল অর্থনীতিতে যোগান দিয়ে থাকে । বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ প্রবাসী। তবুও পরিবার কিংবা সরকার তাঁদের ভালো চোখে দেখে না এমনটাই জানালেন ভুক্তভোগী ওই রেমিটেন্স যোদ্ধা।
আমি মোঃ আব্দুল হালিম। আমার বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ জীবনে পা রাখলেও নানা কারণে লেখা পড়া করা আর সম্ভব হয়নি। ইচ্ছা ছিল দেশের মাঠিতে কোনো কিছু করার, কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সেটিও আর সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি।বেকারত্মের গ্লানি মুছতে বাবার জমানো কিছু টাকা এবং আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার দেনা করে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে গত ১২ বছর আগে পাড়ি জমাই মধ্যপ্রাচ্যের বিলাসী নগরী দুবাইয়ে। মাত্র ১৪ হাজার টাকা সামান্য বেতনের চাকুরী পাই। শুরু হল অর্থ উপার্জন আর স্বপ্ন পুরনের সীমাহিন গন্তব্যের পথ চলা। হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে প্রায় এক দশকের অধিক সময় পার করতে চলেছি। কিন্তু আশা ও স্বপ্ন দুটোই খুব কাছে রয়ে গেল। সবসময় বেদনাহত হয়ে ঢুকরে কেঁদে ফিরে।জানিনা তাদের নুন্যতম চাওয়া টুকু পূরণ করতে পারব কিনা? এখনো আশায় বুক বেঁধে পথ চলি।
আমি শতকরা ৯০ ভাগ প্রবাসী অর্থাৎ সাধারণ শ্রমিকদের কথা বলছি। প্রবাসীরা মাসিক যে বেতন পায় তার এক-তৃতীয়াংশ নিজের রুম ভাড়া,খাওয়া,মোবাইল ও অন্যান্য খরচে চলে যায়। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু অনেকের ভাগ্যে ঠিকমতো বেতন জোটে না,(৪-৫) মাস পর্যন্ত বেতন বাকি থাকে। তখন ধার-কর্জ করে প্রিয়জনের সুখের জন্য টাকা পাঠিয়ে থাকে। কিন্তু সে দুঃখ কাউকে বুঝতে দেয় না। নিরাশার অতল গহবরে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো চোখের নোনাজল উপেক্ষা করে বুকের কষ্ট বুঝতে না দিয়ে মা-বাবাকে, স্ত্রীকে, ভাই-বোনকে বলে আমি ভালো আছি। যারা তাদের স্ত্রীকে দেশে রেখে যায় তারা তো আরো বেশি কষ্টের স্বীকার হয়। কারণ না পারে স্ত্রীকে মনের সব কষ্ট বোঝাতে, আবার না পারে স্ত্রীর মনের কথা বুঝতে। কারণ কোনো উপায় থাকে না। প্রবাস জীবন মানুষের অন্তরকে পুড়ে ছাই করে দেয়।
প্রবাসে যারা থাকে তাদের চোখের পানি দেখারও কেউ থাকে না। আবার চোখের পানি মুছে দেয়ারও কেউ থাকে না। প্রবাসী শুধুই প্রবাসী-শুধুই একা। কষ্টের জালে আবদ্ধ এক জীবন।