ভালুকায় সেনাবাহিনীর হাতে দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার
শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪
২৫ জানুয়ারী ২০২৪, ১২:১৭ অপরাহ্ণ
কয়েক বছর আগেও শরীয়তপুরে পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়তে হতো কৃষকদের। তাই পেঁয়াজ চাষ করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন অনেক কৃষক। তবে গত ২-৩ বছর যাবৎ বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আবাদ বাড়িয়েছেন শরীয়তপুরের কৃষকরা। গত ৫ বছরে এ অঞ্চলে এক হাজার প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ বেড়েছে। সাথে উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৫ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শরীয়তপুর পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলা হওয়ায় এ অঞ্চলের মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বেলে দোআঁশ মাটিতে উৎপাদনও বেশ ভালো। তবে বাজারে দীর্ঘ সময় পেঁয়াজের তেমন ভালো দাম পাওয়া যায়নি। এতে খরচ তোলাই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে গত ৫ বছর ধরে বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর থেকে জেলায় পেঁয়াজের আবাদ বাড়তে থাকে।
আরও জানা যায়, জেলার ছয়টি উপজেলার ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জেলার ৩ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়। এতে উৎপাদন হয়েছে ৩৭ হাজার ৬৪৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। এর পরের বছর ৩ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল ৪৩ হাজার ৩৬৫ মেট্রিক টন। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের উৎপাদন দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৯২ মেট্রিক টনে। এর পরবর্তী বছরে ৪ হাজার ৭১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের উৎপাদন হয় ৪৫ হাজার ২৬৮ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে ৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন।
পেঁয়াজ চাষিরা জানান, অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয়ে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেন তারা। পেঁয়াজ আবাদ করতে কৃষাণ, বীজ, সার, সেচসহ প্রতি মণে উৎপাদন খরচ হয় প্রায় এক হাজার ৪০০ টাকা। বর্তমানে বাজারে নতুন পেঁয়াজের দাম ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা।
জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা রুপবাবুর হাট এলাকার ফেদুল্লা বেপারী কান্দি গ্রামের বাসিন্দা পেঁয়াজ চাষি রফিক মাদবর সংবাদকে বলেন, আমি এবার অন্য বছরের তুলানায় বেশি পেঁয়াজ চাষ করেছি। পেঁয়াজ চাষ থেকে দুইভাবে টাকা আসে। প্রথম ধাপে হাই বিক্রি করি, পরে আবার পেঁয়াজ বিক্রি করি। এছাড়া একই জমিতে পেঁয়াজ ওঠানোর পর গম চাষ করা হবে। সবমিলিয়ে কয়েকবছর ধরে ভালো লাভ হচ্ছে।
নড়িয়া উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের মহিষখোলা এলাকার কৃষক জাফর আলী এবছর তার দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ১৩০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত বাজারে পেঁয়াজের ভালো দাম থাকায় অন্তত এক থেকে দের লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
জাফর আলী আজকের প্রসঙ্গকে বলেন, পাঁচ বছর আগে বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিলো না। এজন্য আমি পেঁয়াজের চাষ বাদ দিয়ে অন্য ফসলের চাষ করেছি। গত কয়েক বছর ধরে বাজারে পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তাই আবার পেঁয়াজ চাষ শুরু করি। এখন আমাদের ভালো লাভ হচ্ছে।
শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক আবুল হোসেন মিয়া আজকের প্রসঙ্গকে বলেন, গত কয়েকবছর ধরে পেঁয়াজের বাজারে দাম ভালো থাকায় আমাদের চাষিরা পেঁয়াজ আবাদের দিকে মনোযোগী হয়েছেন। জেলায় এখন চাহিদার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর বাকি পেঁয়াজ আশপাশের জেলায় বিক্রি করা হয়। উৎপাদন বৃদ্ধি করতে আমরা সবসময় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি।