
রাজধানীতে ধাক্কামারা চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার
৪ সপ্তাহ আগে
৭ জুলাই ২০২৫, ২:২৬ অপরাহ্ণ
রাজধানীর মিরপুর বিআরটিএ অফিস এক সময় ঢাকা মেট্রো-১ সিরিজের গাড়ির ডিজিটাল নাম্বার প্লেট সরবরাহের কেন্দ্র ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে হঠাৎ করেই এই দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয় ঢাকা মেট্রো সার্কেল-৪ এ। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হলেও, বাস্তবে এই পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে চরম জনদুর্ভোগ, বাড়তি ব্যয়, দীর্ঘসূত্রতা—এবং অভিযোগ উঠেছে দুর্নীতির বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠার।
সুবিধা নয়, দুর্ভোগই একমাত্র প্রাপ্তি
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, গ্রাহকরা মিরপুরে যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ও বায়োমেট্রিক কার্যক্রম সম্পন্ন করলেও, নাম্বার প্লেট সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন সার্কেল-৪ অফিসে গিয়ে। এতে করে দিন দিন সাধারণ গ্রাহকদের সময় ও অর্থ ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু শুধু ভোগান্তিই শেষ কথা নয়—সার্কেল-৪-এ গিয়ে পড়তে হচ্ছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের হাতে গড়ে ওঠা ঘুষ ও অনিয়মের ফাঁদে।
সিন্ডিকেটের উত্থান: শুরু মিরপুরেই
গভীর অনুসন্ধানে জানা যায়, এই অনিয়মের শেকড় ছড়িয়ে পড়ে ছিল অনেক আগেই মিরপুর বিআরটিএ থেকেই। এক সময়ের অপারেশন ম্যানেজার সাখাওয়াত হোসেনের সময়েই গড়ে ওঠে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। পরে স্টোর ইনচার্জ মেহেদী হাসানের অধীনে এই চক্রটি আরও সংগঠিত হয়।
এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্লেট লাগানো নিয়ে শুরু হয় অর্থ লেনদেন, যেখানে গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার পরিবর্তে নেয়া হয় ঘুষ। এই চক্রে সরাসরি জড়িত ছিলেন মেহেদী হাসান, আমজাদ হোসেন রুবেল, ইব্রাহিম, শওয়েবুর রহমান মৃধা, সোহেল রানা সহ আরও অনেকে।
প্রকাশ্য দুর্নীতির কারণে একপর্যায়ে তাদের অনেকে চাকরি হারান কিংবা বদলি হন। তবে, এখানেই শেষ নয়।
বদলী ফিরে পাওয়ার রহস্য: প্রভাবশালী ব্যক্তির গাড়িচালকের সম্পৃক্ততা
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিআরটিএর এক পরিচালক এর ব্যক্তিগত গাড়িচালক জসিম হলেন এই চক্রের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তিনি তার ভাই মেহেদী হাসানের অনুরোধে পূর্বের বদলিকৃত সিন্ডিকেট সদস্যদের ঢাকায় মেট্রো ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করেন। পরবর্তীতে তারা আবার একত্র হয়ে যোগ দেন ঢাকা মেট্রো সার্কেল-৪-এ, যেখানে নতুন রূপে আবারও দুর্নীতির চর্চা শুরু হয়।
সার্কেল-৪: দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ভুক্তভোগী গ্রাহক অভিযোগ করেন—সার্কেল-৪ অফিসে গিয়ে নাম্বার প্লেট পেতে ঘুষ না দিলে হয় "স্টোরে জায়গা নেই", "প্লেট এখনও প্রস্তুত হয়নি", কিংবা "রিসিভ কল যাবে পরে"—এইসব অজুহাতে কাজ আটকে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে যারা ‘চেনাজানা লোক’ ধরে যান বা নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে যোগাযোগ করেন, তাদের কাজ হয় দ্রুত। অথচ এসব সেবা সংবিধান ও সরকারি নীতিমালার আলোকে নাগরিক অধিকার।
আবারও মিরপুরেই সেবা চালুর জোর দাবি
গ্রাহকদের দাবি—মিরপুর অফিস থেকেই যেন আবার ডিজিটাল নাম্বার প্লেট লাগানোর কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা হয়। এতে যেমন সেবার মান বৃদ্ধি পাবে, তেমনি কমবে সময় ও অর্থ অপচয়।
সেইসঙ্গে এই দুর্নীতির সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিআরটিএ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।
শেষ কথা
জনগণের সেবা নিয়ে যদি ব্যবসা হয়, তাহলে তার পরিণতি হয় ক্ষোভ, অনাস্থা ও অব্যবস্থাপনা। মিরপুর থেকে সার্কেল-৪-এ নাম্বার প্লেট কার্যক্রম সরানোর মাধ্যমে দুর্নীতির যে ভিত্তি তৈরি হয়েছে, তা শুধু সাধারণ নাগরিকের অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে না—বরং সরকারি ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকেও সংকটে ফেলছে।