বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মানিকগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্য ঝিটকার পোদ্দার বাড়ি


১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৫ অপরাহ্ণ 

মানিকগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্য ঝিটকার পোদ্দার বাড়ি
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনা নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। আক্ষরিক অর্থে না হলেও সুদূর অতীতকে অনুভব করার এক চমৎকার উপায় হলো ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানসমূহ। তেমনই এক ঐতিহাসিক নিদর্শন মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা পোদ্দার বাড়ি।

ইছামতী নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা ঝিটকা হাট ব্রিটিশ আমল থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। উনিশ শতকের শুরুর দিকে এই অঞ্চলে ৭ একর জমির উপর  দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরি করেন তিন সহোদর ভাই। তারপর থেকেই এটি ঝিটকা পোদ্দার বাড়ি নামে পরিচিতি লাভ করে।

জানা যায়, উপজেলার ঝিটকা অঞ্চলের বাল্লা ইউনিয়নের তৎকালিন সময়ের ধনাঢ্য পরিবার খ্যাত পোদ্দার বাড়ির মূল কর্ণাধার ছিলেন মহারাজ পোদ্দার। মহারাজ পোদ্দারের ছিল দুই সন্তান। রাম পোদ্দার ও আনন্দ মোহন পোদ্দার। এই আনন্দ মোহন পোদ্দারের ছিল তিন ছেলে। যোগেশ্বর পোদ্দার, সর্বেশ্বর পোদ্দার ও হরমোহন পোদ্দার। বাবার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৭ একর জমির ওপর উনিশ শতকের গোড়ার দিকে তিন সহোদর মিলেই গড়ে তোলেন দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন স্থাপনা।

বাড়িটিতে ঢুকতেই চোখে পড়বে সবুজ মাঠের দক্ষিণ পাশে পুকুরের দৃষ্টিনন্দন ঘাট। এর পাশে বিশাল চৌচালা ঘর। ঘরটির চাল টিনের হলেও চারপাশের দেয়াল কাঠের। চারপাশের বারান্দাও কাঠের তৈরি। এই ঘরেই বিচার–সালিস হতো। এর উত্তর পাশে পূর্ব-পশ্চিমে দৃষ্টিনন্দন বিশাল আধা পাকা ঘর। এর পেছনে অর্থাৎ উত্তর পাশে আছে দক্ষিণ পশ্চিম ও পূর্বমুখী কারুকার্যখচিত তিনটি প্রাসাদ। একতলাবিশিষ্ট প্রতিটি প্রাসাদে চার থেকে পাঁচটি করে বিশালাকার কক্ষ রয়েছে। এই প্রসাদেই থাকতেন পোদ্দার বাড়ির সদস্যরা। তবে সংস্কারের অভাবে প্রাসাদগুলো এখন জরাজীর্ণ। বাড়ির চারপাশে রয়েছে আম, নারকেল, কাঁঠালসহ বিভিন্ন গাছগাছালি।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় আনন্দ মোহন পোদ্দারের বংশধরেরা স্বপরিবারে ভারতে চলে যায়। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার বাড়িটি অধিগ্রহণ করলেও ২ একর জমি বাড়ির বংশধরদের রয়ে যায়। বর্তমানে এই বাড়িটি উপজেলার অন্যতম এবং একমাত্র দর্শনীয় স্থান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিও বহন করে বাড়িটি। ওই সময় এখানে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প করা হয়। আগস্ট মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ক্যাম্প পরিচালিত হয়।

এই বাড়ি দেখতে প্রতিদিন জেলা ও জেলার বাইরে থেকেও আসেন দর্শনার্থীরা। রাজধানী ঢাকা থেকে ঝিটকা পোদ্দার বাড়িতে পৌঁছাতে সড়কপথে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা লাগে। হেমায়েতপুর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে মানিকগঞ্জ শহরের বেউথা থেকে সরাসরি ঝিটকায় যাওয়া যায়। সেখান থেকে এক কিলোমিটার এগোলেই চোখে পড়বে ঝিটকা পোদ্দার বাড়ি।

পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী সুমন রহমান বলেন, জায়গাটা খুব সুন্দর এবং মনোরম। গ্রামীণ পরিবেশে একদমই অন্যরকম একটা জায়গা। আমার অন্যতম পছন্দের জায়গা এটি, তাইতো সুযোগ পেলেই এখানে বেড়াতে চলে আসি।

স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ী জব্বার মিয়া জানান, দুইশো বছরেরও বেশি পুরনো এই বাড়িটি। আমরা জন্মের পর থেকে এভাবেই দেখে আসছি। আগে এখানে পোদ্দার পরিবারের লোকজন বাস করতো, এখন তারা কেউ থাকেন না। প্রতিদিনই এখনে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন বেড়াতে আসেন। আমি মনে করি এটি আমাদের এলাকার একটি ঐতিহ্য। তবে অযত্ন অবহেলায় বাড়িটির সৌন্দর্য এখন কিছুটা মলিন হয়ে গেছে। সরকারি ভাবে উদ্যোগ নিয়ে সংস্কার করা হলে বাড়িটি আরো সুন্দর হবে।

এই বাড়িটি প্রসঙ্গে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, ঐতিহাসিক এই বাড়িটি নিয়ে সংস্কৃত মন্ত্রণালয়ে আমরা একটা ডিজাইন করে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু ঐখান থেকে আমরা কোন ফিডব্যাক পাইনি। তবে আমাদের এটা নিয়ে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। এ ব্যাপারে আবারও যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে।