সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫

ইসলামের প্রকৃত ক্ষেদমতকারী বঙ্গবন্ধু


১ আগস্ট ২০২৩, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ 

ইসলামের প্রকৃত ক্ষেদমতকারী বঙ্গবন্ধু
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

বাংলা গড়ার জন্য জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজুবর রহমান সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের এ দেশে ইসলামের সঠিক মূল্যবোধ কায়েম করতে চেয়েছেন। মানুষকে ধর্মের শিক্ষায় আলোকিত করতে চেয়েছেন। যাতে শান্তিপূর্ণ ও মানবিক সমাজ গড়ে ওঠে এই বাংলাদেশে। তিনি তার শাসনামলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জনমানসে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে যে অসামান্য অবদান রেখেছেন, সমকালীন মুসলিম বিশ্বে এর দৃষ্টান্ত বিরল।

বঙ্গবন্ধু বলেছেন, 'আমাদের ইসলাম হযরত রাসূলে করীম (স.)-এর ইসলাম, "যে ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র। আমাদের সংগ্রাম সেই মোনাফেকদের বিরুদ্ধে।"  

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম হজযাত্রীদের জন্য সরকারি তহবিল থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করেন বঙ্গবন্ধু। এ সুবিধা কোনো আমলে ছিল না। এদিকে, ইসলামি আকিদাভিত্তিক জীবন গঠন ও ইসলামি শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড পুনর্গঠন করেন। মাদ্রাসা শিক্ষার আজকের প্রসারের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাই মুখ্য।

ইসলামে মদ, জুয়া, হাউজি ও অসামাজিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু আইন করে মদ, জুয়া, হাউজি ও অসামাজিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে শাস্তির বিধান জারি করেন।

ঢাকার বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নাম ছিল রেসকোর্স ময়দান। সেখানে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা হতো। পাশাপাশি আরও চলত জুয়া, হাউজি ও বাজিধরা। বঙ্গবন্ধু স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত ঘোড়দৌড় বন্ধ করেন। মহানবী (স.) বৃক্ষরোপণের নির্দশনায় অনুপ্রাণিত হয়ে রেসকোর্স ময়দানের অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে তিনি সেখানে বৃক্ষরোপণ করেন এবং সেই স্থানের নাম রাখেন 'সোহরাওয়ার্দী উদ্যান'। ঢাকা মহানগরীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বৃক্ষরাজি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবহন করে চলেছে আজও।

বিশ্ব ইজতেমার জায়গাও বরাদ্দ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। তাবলীগ জামাত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। ইসলামের পথে দাওয়াত দেওয়াই হচ্ছে এ সংগঠনের একমাত্র কাজ। এ সংগঠনটি যাতে বাংলাদেশে অবাধে ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে এ উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার জন্য টঙ্গীতে সুবিশাল জায়গা বরাদ্দ করেন। প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে দাওয়াতি কাজে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার তাবলীগি ভাই এ জামাতে সমবেত হন। বঙ্গবন্ধু টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার এ স্থানটি বরাদ্দ করেছিলেন বলেই ইজতেমায় আগত লক্ষ লক্ষ মুসলিম এখানে সমবেত হয়ে কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করে দাওয়াতি কাজ পরিচালনার জন্য বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার শাসনকালে (১৯৭২-১৯৭৫) দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণের জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ভৌত অবকাঠামোগত পদক্ষেপ যেমন ছিল, তেমনি তিনি ইসলামের প্রচার-প্রসারে বাস্তবভিত্তিক ও কার্যকরী ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছিলেন। আজকে ঈদের তারিখ নির্ধারণ থেকে শুরু করে ধর্মবিষয়ক যেকোনো সংকটে যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থাকি আমরা, এটিও প্রতিষ্ঠা করেছেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অধ্যাদেশ বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। 

এছাড়াও, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুই সর্বপ্রথম আলেম-ওলামাদের সংগঠিত করে পবিত্র ইসলামের সঠিক রূপ জনগণের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ নেন। তার দিকনির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় সীরাত মজলিশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। সীরাত মজলিশ ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে রবিউল আউয়াল মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বৃহত্তর আঙ্গিকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) মাহফিল উদযাপনের কর্মসূচি গ্রহণ করে। সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বরে মাহফিলের উদ্বোধন করেন। একজন সরকার প্রধান হিসেবে জাতীয়ভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) মাহফিলের উদ্বোধন উপমাহাদেশের ইতিহাসে প্রথম দৃষ্টান্ত। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে প্রতিবছর জাতীয়ভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা) মাহফিল উদযাপন হয়ে আসছে।

এমনকি ইসলামের ধর্মীয় দিবসগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাংলাদেশে ঈদে-মিলাদুন্নবী (স), শব-ই-কদর, শব-ই-বরাত উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। উল্লিখিত দিনসমূহের পবিত্রতা রক্ষার জন্য সিনেমা হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন।

১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু আরব বিশ্বের পক্ষ সমর্থন করেন এবং যুদ্ধে বাংলাদেশ তার সীমিত সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ অবদান রাখার চেষ্টা করে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সমর্থনে এক লাখ পাউন্ড চা, ২৮ সদস্যের মেডিকেল টিমসহ একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী পাঠানো হয়।

মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) অধিবেশনে যোগ দেন জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু। ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করে ইসলাম ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু মুসলিম নেতাদের সামনে যে বক্তব্য তুলে ধরেন, এতে আরবসহ মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের ভাব-মর্যাদা সমুন্নত হয় এবং মুসলিম বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে সুদৃঢ় বন্ধন গড়ে ওঠে।