বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ঢাকার নামকরা কলেজের শিক্ষার্থী এখন ছিনতাইকারী


২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ 

ঢাকার নামকরা কলেজের শিক্ষার্থী এখন ছিনতাইকারী
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিলেন শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান। এসএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়ে ভর্তি হন রাজধানীর একটি নামকরা কলেজে। সেই শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান নেশায় আসক্ত হয়ে এখন ছিনতাইকারী। ছিনতাই করতে গিয়ে শুক্রবার পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। এ নিয়ে থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী।

গত শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) রাতে মিরপুরের পল্লবী এলাকায় তিন বন্ধুকে নিয়ে দুটি মোটরসাইকেলে করে ছিনতাইয়ে বের হয় শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান। রিকশা আরোহী এক নারীর ব্যাগ ছিনতাই করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন তিনি। পালিয়ে যান তাঁর বন্ধুরা। পুলিশ বলছে, রাত হলেই এই চক্রের সদস্যরা মিরপুর এলাকায় ছিনতাই করেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ও তাঁর বন্ধুরা যে নারীর ব্যাগ ছিনতাই করেন, তাঁর নাম সাবিনা ইয়াসমিন। ওই ঘটনায়, তিনি মিরপুর থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় শিক্ষার্থী শাহরিয়ারকে আইনের সংস্পর্শে আনে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। তাঁর পলাতক তিন বন্ধু হলেন তৌহিদুল হাসান, মানিক ও শাওন।

সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, বাসা থেকে রিকশায় করে মিরপুর কমার্স কলেজের পাশের একটি খাবার হোটেলে যাচ্ছিলাম। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে কয়েকজন এসে চলন্ত রিকশা থেকে আমার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। পালিয়ে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যায় এক ছিনতাইকারী। স্থানীয় লোকজন ধরে তাঁকে পুলিশে দেন।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মেধাবী শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের বাবা বিদেশে থাকেন। মিরপুরে তাঁদের একটি বাড়ি রয়েছে। পড়ালেখায় মেধাবী ছিলেন শাহরিয়ার। এক সময় ধূমপায়ী বন্ধুদের সঙ্গে মিশতেনও না। পরে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে নেশায় আসক্ত হন এই শিক্ষার্থী। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর বাবা তাঁকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেন। সেই মোটরসাইকেল দিয়েই বন্ধুদের সঙ্গে ছিনতাই করেন শাহরিয়ার।

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহরিয়ার পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর ও মানিকের বাসা পাশাপাশি। মানিকের মাধ্যমে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। মানিক অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পর আর পড়াশোনা করেননি। তিনিই শাহরিয়ারকে অপরাধ জগতে নিয়ে এসেছেন।

পুলিশের তথ্যমতে, রাজধানীতে ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ৬ হাজারের বেশি ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৭৩৭ জন ছিনতাই এবং ৪ হাজার ৪৬১ জন ডাকাতিতে জড়িত। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডারে এসব অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ বৃত্তান্ত রয়েছে। এতে রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকায় ছিনতাই ও ডাকাতিতে জড়িত ব্যক্তিদের তথ্য রয়েছে।

পুলিশের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পুলিশের বিভাগ হিসেবে সবচেয়ে বেশি তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী ও ডাকাত রয়েছে তেজগাঁও বিভাগে। সবচেয়ে কম মিরপুর বিভাগে। থানা হিসেবে ছিনতাইকারী ও ডাকাতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ভাটারা, শাহবাগ ও শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় (প্রতিটি থানায় ৩৪ জন করে)। 

এরপর রয়েছে হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, তেজগাঁও, রমনা, হাতিরঝিল ও উত্তরা পশ্চিম থানা। সবচেয়ে কম ছিনতাইকারী ও ডাকাতের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে উত্তরখান, দক্ষিণখান ও উত্তরা পূর্ব থানায়। এই তিন থানা এলাকার ৬ জন করে মোট ১৮ জন তালিকাভুক্ত হয়েছে।