কিন্তু বিস্ময়কর এই ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানের লুকিয়ে আছে রূপ, নামকরণের মজার ইতিহাস। গেণ্ডারিয়া, ভুতের গলি, মহাখালী, মাহুতটুলি, পিলখানা, এলিফ্যান্ট রোড, ইন্দিরা রোড, কাকরাইল, রমনা পার্ক, গোপীবাগ, পরিবাগ, পুরাতন পল্টন, পাগলা পুল, ফার্মগেট বা বকশীবাজার এলাকার বিভিন্ন নামের পেছনে রয়েছে নানা ইতিহাস। তাহলে চলুন জেনে নিই ঢাকার বিভিন্ন এলাকার নামকরণের মজার ইতিহাস।
গেণ্ডারিয়া
গ্র্যান্ড এরিয়া এক সময় ঢাকা শহরের একটি বিখ্যাত এলাকা ছিল। তৎকালীন জমিদার ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সেখানে বসবাস করতেন বলে ইংরেজরা এমন নাম দিয়েছে। কিন্তু বাঙালিরা এই নামটিকে কঠিন মনে করে এবং গ্র্যান্ড এরিয়াকে নিজেদের গেন্ডারিয়া হিসেবে গ্রহণ করে। যাইহোক, এই তত্ত্বের বিরুদ্ধে যুক্তি আছে। অনেক ইতিহাসবিদ বলেন, এই এলাকায় একসময় প্রচুর আখের চাষ হতো। আর সেখান থেকেই গেন্ডারিয়া নামটি এসেছে।
ভুতের গলি
এলাকাটি তার নামের কারণে বিখ্যাত। কারণ নাম তো ভূতের গলি! এখানে এক ইংরেজ ভদ্রলোক থাকতেন। তার নাম মিস্টার বুথ। তিনিই ওই এলাকার প্রথম ইংরেজ ভদ্রলোক। তাই তার নামানুসারে জায়গাটির নামকরণ করা হয় বুথের গলি। কিন্তু কালক্রমে বুথের গলি ভূতের গলিতে পরিণত হয়।
মহাখালি
জানা যায়, বর্তমান মহাখালী মহাকালী নামে একটি মন্দিরের নাম থেকে এসেছিল।
মাহুতটুলি
মাহুত মানে হাতির চালক। যারা হাতি পালন ও দেখাশোনা করেন তাদের মাহুত বলা হয়। মুঘল শাসনামলে বিপুল সংখ্যক মাহুত হাতিসহ ঢাকায় আসেন। তারা নিজেদের জন্য যে এলাকা গড়ে তুলেছে সেটি এখন মাহুতটুলি নামে পরিচিত।
পিলখানা
পিলখানা নামটিও ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। ফার্সি ভাষায় 'পিল' অর্থ হাতি এবং 'খানা' অর্থ স্থান। পিলখানা মানে এমন জায়গা যেখানে হাতি রাখা হয়। মুঘল শাসকদের একটি প্রিয় খেলা ছিল হাতির লড়াই। তাই সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে হাতি এনে ধানমন্ডির একটি এলাকায় রাখা হয়েছিল। যা পরবর্তীতে পিলখানা নামে পরিচিতি লাভ করে।
এলিফ্যান্ট রোড
পিলখানা হতে হাতিগুলোকে নিয়ে যাওয়া হতো হাতির ঝিলে গোসল করাতে, তারপর রমনা পার্কে নেওয়া হতো রোদ পোহাতে। সন্ধ্যা নামার আগেই হাতির দলগুলোকে পিলখানায় নিয়ে আসা হতো। হাতিদের যাতায়াতের রাস্তাটির নামকরণ সেই কারণে এলিফ্যান্ট রোড রাখা হয়।
ইন্দিরা রোড
১৯৩০ সালের দিকে দ্বিজদাস বাবু নামে এক ধনী ব্যক্তি এই এলাকায় বসবাস করতেন। তার একটি বিশাল বাড়ি ছিল এবং রাস্তাটি তার পাশ দিয়ে গেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দ্বিজবাবুর বড় মেয়ে ইন্দিরা অকালে মারা যান। ওই মৃত মেয়ের নামানুসারে দ্বিজবাবু রাস্তার নামকরণ করেন ইন্দিরা রোড।
কাকরাইল
১৯ শতকের শেষ দশকে, ঢাকার কমিশনার হিসেবে যখন দায়িত্ব পালন করছিলেন মিস্টার ককরেল, তার সম্মানে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছিল। কালক্রমে ককরেল হয়ে ওঠে কাকরাইল, আর এখন পুরো এলাকা এই নামেই পরিচিত।
রমনা পার্ক
রাম নাথ বাবু নামে এক ধনী বাবু রমনা এলাকায় থাকতেন। তিনি নিজের নামে রমনা কালী মন্দির নির্মাণ করেন। আর সেই মন্দিরের পাশেই ছিল ফুলের বাগান আর স্পোর্টস পার্ক। কালক্রমে পুরো এলাকা রমনায় পরিণত হয় এবং পার্কের নাম হয় রমনা পার্ক।
গোপীবাগ
এলাকাটি গোপীনাথ সাহা নামে এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল। তিনি এখানে গোপীনাথ জিউর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। আর সেই মন্দিরের (বা তার নিজের নাম) পরে এলাকাটির নাম হয় গোপীবাগ।
পরীবাগ
নবাব সলিমুল্লাহর সৎ বোন ছিলেন পরীবানু। নবাব সলিমুল্লাহ এই এলাকায় তার সৎ বোনের জন্য একটি বাগানবাড়ি তৈরি করেন। ওই বাগানবাড়িতে পরীবানু থাকতেন বলে তার নামানুসারে ওই এলাকার নামকরণ হয় পরীবাগ।
পুরানো পল্টন, নয়া পল্টন
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ঢাকা সেনানিবাসে একটি প্লাটুন সেনা ছিল। প্লাটুনের নামানুসারে পল্টন নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে আগাখানিরা এই বিভাগকে দুই ভাগে বিভক্ত করেন। নতুন পল্টন ছিল আবাসিক এলাকা এবং পুরনো পল্টন ছিল বাণিজ্যিক এলাকা।
পাগলাপুল
সপ্তদশ শতাব্দীতে এখানে একটি নদী ছিল। নদীর নাম ছিল পাগলা। পরে মীর জুমলা এই নদীর উপর একটি সুন্দর পুল তৈরি করেন। সুন্দর পুলটি দেখতে সেসময় এসেছেন অনেকেই। সেখান থেকেই স্থানটির নাম হয় পাগলপুল।
ফার্মগেট
ব্রিটিশ সরকার কৃষি উন্নয়ন, কৃষি ও পশুপালন গবেষণার জন্য এখানে একটি খামার প্রতিষ্ঠা করেছিল। ওই খামারের প্রধান ফটক বা গেট থেকে এলাকার নাম ফার্মগেট।
বকশিবাজার
বকশী একটি উপাধি বা উপাধি যা মূলত মুসলমানদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। মুঘল আমলে বেতন বণ্টনে নিয়োজিত রাজকর্মচারীদের বকশি বলা হত। আর এই এলাকায় ছিল তাদের সরকারি বাসস্থান। তাছাড়া এখানে তারা বাজার গড়ে তোলে। সে হিসেবে এলাকার নাম হয় বকশীবাজার।