রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪

একটা দেশ কখন স্বেচ্ছায় মুদ্রার মান কমিয়ে রাখে?


একটা দেশ কখন স্বেচ্ছায় নিজেদের মুদ্রার মান কমিয়ে রাখে? এতে সেই দেশের কী কী লাভ এবং ক্ষতি হতে পারে? এবং এতে বিশ্ব অর্থনীতির কী কী লাভ এবং ক্ষতি হয়?

২৬ নভেম্বর ২০২৩, ১:১৭ অপরাহ্ণ 

একটা দেশ কখন স্বেচ্ছায় মুদ্রার মান কমিয়ে রাখে?
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

মুদ্রার মান কমিয়ে রাখার মানে হলো মার্কিন ডলার বা ইউরোর সঙ্গে বিনিময়ের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় বর্তমানে অধিক দেশজ মুদ্রা পাওয়া, যা প্রধানত রপ্তানিকারকদের সুবিধা দিয়ে থাকে।

একটি দেশ তাদের রপ্তানি বাণিজ্যকে গতিশীল করে তুলতে নিজেদের মুদ্রার মান কমিয়ে রাখতে পারে। মুদ্রার মান কমিয়ে রাখলে ডলার আদান প্রদানের সময় রপ্তানিকারকেরা বেশি দেশজ মুদ্রা লাভ করেন যা দেশকে রপ্তানিতে উৎসাহিত করে। একই সাথে মুদ্রা পাচারকে অনুৎসাহিত করে। প্রবাসীরা বৈধ পথে অর্থ প্রেরণে উৎসাহী হন এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে শুরু করে।

অন্যদিকে, দেশের আমদানিকারকেরা এতে কম লাভবান হন। অন্যান্য দেশের সাথে বাণিজ্যের বিবেচনায়, তাদেরকে একই পরিমাণ ডলারের বিপরীতে অধিক মূল্য পরিশোধ করতে হয়। যেসব দেশের আমদানির তুলনায় রপ্তানি অধিক সেসব দেশ বাড়তি লাভের আশায় কৃত্রিমভাবে মুদ্রার দাম কমিয়ে রেখে প্রচুর মুনাফা অর্জন করতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও হংকং এর কথা বলা যেতে পারে। এসকল দেশ তাদের মুদ্রার মান কিছুটা কৃত্রিমভাবে কমিয়ে রাখছে বা তাদের মুদ্রাকে খানিকটা দুর্বল করে রাখছে। এতে তারা রপ্তানিতে প্রচুর আয় করতে সক্ষম হচ্ছে যা তাদের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করছে।

মুদ্রার মান কমিয়ে রাখার অনেক নেতিবাচক দিক রয়েছে। কারণ, আমরা এখন মুদ্রাযুদ্ধের মধ্যে আছি। মুদ্রাযুদ্ধের অর্থ হলো, সকল দেশ যার যার মুদ্রার মান কমিয়ে রাখার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বিশ্বের অনেক দেশই এখন মনে করছে যে এভাবে মুদ্রার মান কমিয়ে রেখে নিজেদের অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার করা যাবে। এ ধারণা অনেক ক্ষেত্রেই ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। মুদ্রার মান কম থাকলে একটি দেশে আমদানি নিরুৎসাহিত হয়, ফলে বৈদেশিক বিনিয়োগ হ্রাসের ক্ষেত্রে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে।

দীর্ঘ সময় ধরে এমন চলতে থাকলে দেশে মুদ্রাস্ফীতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। একটি দেশের মুদ্রার মান কম থাকলে অন্যান্য দেশের অনেক নাগরিক সে দেশে অর্থ পাচার করা শুরু করে। দেশে স্বাভাবিকের চাইতে অধিক মুদ্রার যোগান ও লেনদেন লক্ষ্য করা যায়। এর ফলে মুদ্রার দর ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে, আন্তর্জাতিক বানিজ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি ডেকে আনবে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেদের মুদ্রার দর ঊর্ধ্বমুখী বা শক্তিশালী হয়ে ওঠার প্রবণতা ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন, জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মুদ্রাবাজারে ইয়েন বিক্রি করেছে। সম্প্রতি মার্কিন ডলার ও ইউরোর বিপরীতে ইয়েনের দর ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে ওঠায় তা রুখতে ব্যাংক অব জাপান এই পদক্ষেপ নেয়। এদিকে ব্রাজিলের সরকার বৈদেশিক মুদ্রায় সে দেশের বন্ড ক্রয়ের ওপর কর হার দ্বিগুণ করে দিয়েছেন। মুদ্রা যুদ্ধকেই এর জন্যে দায়ী মনে করা হচ্ছে।

তাই, আপাতদৃষ্টিতে মুদ্রার মান কমিয়ে রাখাকে অনেক সুবিধাজনক মনে হলেও দীর্ঘকালব্যাপী এমনটা চলতে থাকলে বিশ্ববাণিজ্য সংকটাপন্ন অবস্থায় নিমজ্জিত হবে। চাহিদা ও যোগান মাফিক মুদ্রার মান নির্ধারনের জন্যে আইএমএফ এর উচিত মুদ্রা যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং সকল দেশকে মুদ্রানীতিতে সতর্ক অবস্থানে যাওয়ার জন্যে উৎসাহিত করা।