জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ গুণী শিক্ষক নির্বাচিত হলেন সুলতানা রাজিয়া
শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪
২১ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ
বাংলায় একটি প্রবাদ রয়েছে, ‘দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পোষা’। কাউকে ভালোবেসে আদর যত্নে বড় করে তোলার পর সেই ব্যক্তি যখন ক্ষতি করে বসে তখন বলা হয় ‘দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পোষা’। এটা আমাদের দেশে একটা মারাত্নক লেভেল এর অযৌক্তিক কথা। বহু গল্পকথাতেও দেখা যায় সাপ বাটি থেকে দুধ খাচ্ছে! এমন ঘটনা ঘটা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু সাপ কি সত্যিই দুধ খায়? আসল বৈজ্ঞানিক তথ্য জানলে আপনিও চমকে উঠবেন!
সাপ কখনো দুধ বা কলা খায় না। এদের স্বাভাবিক খাবার ইঁদুর, ব্যাঙ, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি। দুধ-কলা এদের খাদ্য তালিকায় কোনো দিনই ছিল না। সাপের জিভ সরু এবং চেরা। তাই কোনো কিছু চুষে খাওয়া এদের পক্ষে খুব কষ্টকর। এছাড়াও চুষে খেতে যে জোর লাগে সেই জোর এদের ফুসফুসে প্রায় নেই। তরল বলতে কোন রকমে জল পান করে মাত্র। দুধ হজম করতে যে উপাদানটি প্রয়োজন হয়, সাপের পাকস্থলিতে সেই উপাদানটি কখনও তৈরি হয় না। অর্থাৎ সাপ কখনও-ই দুধ হজম করতে পারে না।
তবে সাপুড়েরা যখন সাপ খেলা দেখান, তখন অনেক সময়েই দেখা যায়, তাঁদের কাছে সাপ দুধ খাচ্ছে! কি করে সম্ভব? বৈজ্ঞানিকরা বলছেন, এক্ষেত্রে সাপকে দীর্ঘদিন জল না খাইয়ে রাখা হয়। তারপর যে-কোনও ধরণের তরল পদার্থ পান করতে দিলেই তারা সেটা পান করে। সাপকে দুধ খাওয়ানোর জন্য সাধারণত এই পদ্ধতিই অবলম্বন করে সাপুড়েরা।
অনেকে বলবেন গ্রামে গরুর ওলান থেকে খেতে দেখেন। সাপ শোষন করে কিছু খেতে পারে না, গিলে খায়, গরুর বাটকে ইদুর মনে করে গিলতে চেস্টা করে, লোকে ভাবে দুধ খায়। গরুর বাঁট থেকে দুধ খেতে হলে চুষে খেতে হবে। কিন্তু চুষে খাবার কোনো ব্যবস্থা সাপের শরীরে নেই। কোনো তরল চুষে খেতে হলে মুখের এবং বুকের ভেতরকার চাপ হঠাৎই অনেকটা কমিয়ে ফেলতে হয়। এই হঠাৎ চাপ কমে যাবার ফলেই বাইরের তরল বায়ু মণ্ডলের চাপে গলার ভিতরে চলে আসে। মানুষের বেলায় বুক ও পেটের মাঝখানে মধ্যচ্ছদা হঠাৎই নিচের দিকে নেমে গিয়ে বুকের ভেতরকার চাপকে অনেকটা কমিয়ে ফেলে। কিন্তু সাপের কোনো মধ্যচ্ছদা থাকে না। ফলে সাপের পক্ষে বুকের চাপ হঠাৎ কমিয়ে ফেলা সম্ভব নয়, তাই সে চুষে খেতে পারে না। এই কারণেই সাপের পক্ষে গরুর বাঁট থেকে দুধ চুষে খাওয়া অসম্ভব। আর দুধ সাপ হজমও করতে পারে না। ফলে দুধ খেলে হয় তার নিশ্চিত মৃত্যু।
এবার কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাক যেগুলো আপনার মনে আসতে পারে।
১.গরুর পায়ে সাপের আঁশের দাগ দেখা যায়।
২.গরুর পিছনের পায়ে সাপের জড়ানোর চিহ্ন দেখা যায়।
৩. কেউ কেউ সাপের দাঁতের চিহ্নও দেখছেন। তাছাড়া গরুর বাঁটে দুধ থাকে না।
আসলে এগুলো প্রমাণ করে না যে, সাপ গরুর বাঁট থেকে দুধ খায়। কিন্তু সাপের জিভ সরু এবং চেরা। তাই কোনো কিছু চুষে খাওয়া এদের পক্ষে খুব কষ্টকর। এছাড়াও চুষে খেতে যে জোর লাগে সেই জোর এদের ফুসফুসে প্রায় নেই। তরল বলতে কোন রকমে জল পান করে মাত্র। দুধ হজম করতে যে উপাদানটি প্রয়োজন হয়, সাপের পাকস্থলিতে সেই উপাদানটি কখনও তৈরি হয় না। অর্থাৎ সাপ কখনও-ই দুধ হজম করতে পারে না।
আপনার প্রথম প্রমাণটি হচ্ছে, গরুর পায়ে সাপের আঁশের দাগ দেখতে পান। সাপ নিয়ে অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, সাপ যখন বালি কিংবা ভেজা মাটির উপর দিয়ে চলে যায়, কেবল তখনই আঁশের ছাপ পড়ে; অন্য কোনোভাবে পড়ে না। অতএব, গরুর লোমশ পায়ে আঁশের দাগের কোনো যুক্তি-যুক্ত কারণ নেই। সাপুড়ের হাতের চামড়ায় কখনও সাপের আঁশ পড়ে না। সুতরাং, গরুর পায়ে সাপের আঁশ দেখতে পাওয়া সত্য নয়। মানুষ রসিয়ে কথা বলতে ভালোবাসে। যার ফলে কিছু সত্য ঘটনার সাথে অনেক মিথ্যা ঘটনাও জুড়ে দেয়!
দ্বিতীয় প্রমাণটি হচ্ছে, গরুর পায়ে সাপের জড়ানোর চিহ্ন। হ্যাঁ; গরুর পায়ে যে সাপ জড়ায়, -এটা প্রমাণিত হয়েছে। রাতে গোয়াল ঘরে ব্যাঙ, ইঁদুর ঢুকে পড়ে। সাপও খাবারের খোঁজে ঢুকে। কখনও বা খড় থেকে তাপ নেয়ার জন্যও ঢুকে। গরু তার পা নড়াচড়া করতে থাকে। ফলে সাপ গরুর পায়ের ক্ষুরের আঘাত পাওয়ার সম্ভবনা বুঝতে পারে। তাই সাপ গরুর পা-কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে যতোক্ষণ না অবশ হয়ে পড়ে। তারপর সাপ নির্বিঘ্নে তার শিকার ধরতে নেমে যায়।
তৃতীয় প্রমাণটি হচ্ছে, দাঁতের চিহ্ন দেখা যায় এবং গরুর বাঁটে দুধ থাকে না। গরুর বাঁট পরিষ্কার না থাকলে ব্যাকটেরিয়া(যেমন: ব্যাসিলাস) এবং ছত্রাক(যেমন: কেনডিডা) আক্রমণ করে। এ থেকে চামড়ায় ছোট ছোট ফুস্কুড়ি বা ছিদ্র দেখা দেয়। এগুলোকেই সাপের দাঁত ভেবে ভুল করতে পারেন। সাপ তার শিকার ব্যাঙ বা ইঁদুরকেও দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে না। আসলে সাপের দাঁত এমনভাবে তৈরি যে, সাপ কেবল ছোবল মারলেই দাঁতের দাগ পড়ে। আর ছোবল মারলে তো গরু এমনিতেই মারা যাবে। আর গরুর বাঁটে দুধ না থাকার ব্যাপারটাকে প্রতিবর্ত বলে। প্রতিবর্ত হলো, জীবের এক ধরণের ব্যবহার যেটা অনেকটা তার নিজের অজান্তেই ঘটে যায়। সাপ দুধ খেয়েছে এই দৃঢ় বিশ্বাস থেকে গরুর বাঁটে দুধও কমে গেছে বলে আমাদের মস্তিষ্ক মেনে নেয়।