খুকৃবিতে ভেটেরিনারি অনুষদের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষা সফর
রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
৬ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ
সার্বিকভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমলেও ঢাকার বাইরে পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। ঢাকার বাইরে দুটি হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে যত রোগী মারা গেছে, এর মধ্যে ৪০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে দুই হাসপাতালে। হাসপাতাল দুটি হলো ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নেওয়া তিন হাজার ৩৪০ রোগীর মধ্যে মারা গেছে ১১৪ জন, যা দেশের হাসপাতালগুলোর মধ্যে মৃত্যুহারে সর্বোচ্চ। এই হাসপাতালে প্রতি ৩০ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে সাত হাজার ৭৫ জন। মৃত্যু ১১৫ জনের। প্রতি ৬১ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু এই দুই হাসপাতালে এর আগে হয়নি। দেশের অন্যান্য হাসপাতালের চেয়ে এ দুই হাসপাতালে রোগীর চাপ কিছুটা বেশি। ঢাকার বাইরে আর কোনো হাসপাতালে একশ মৃত্যু নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ফরিদপুর শহরে রোগী কম। আশপাশের জেলা মাগুরা, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জের কিছু অংশ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর থেকে রোগী বেশি আসছে। এসব রোগী সঠিক সময়ে চিকিৎসা পায় না বা চিকিৎসার আওতায় আসে না। যখন তাদের ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে, তখন তারা খারাপ অবস্থায় চলে গেছে। ডেঙ্গু হলে রোগীরা অনেকে সাধারণ জ্বর মনে করে বাড়িতে থাকছে। অবস্থা গুরুতর হলে হাসপাতালে আসছে। এ কারণে বেশির ভাগ রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হচ্ছে।
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই হাসপাতাল অনেক পুরনো। এখানে বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলা এবং এর সঙ্গে মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনা ও ঢাকা বিভাগের কিছু অংশের রোগী চিকিৎসা নেয়। প্রাথমিক অবস্থায় রোগীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। অবস্থা আরো খারাপ হলে এসব রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।
তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতাল ছাড়া বরিশাল বিভাগের আর কোথাও আইসিইউ নেই। ডেঙ্গুর যেসব রোগী আমাদের এখানে আসে তাদের একটা বড় অংশ শক অবস্থায় আসে। তখন আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন।
অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৫৬০ জন। এর মধ্যে বরিশালের শের-ই-বাংলা হাসপাতাল ও ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে মারা গেছে ২২৯ জন। এই হিসাবে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে যত মৃত্যু হয়েছে এর ৪০ শতাংশ এই দুই হাসপাতালে মারা গেছেন। আর ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৮২০ জন। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঢাকার বাইরে বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি হলেও এই বিভাগের ছয়টি জেলায় এখন পর্যন্ত ১৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বরিশাল বিভাগে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩ হাজার ৩০৩ জন। এই বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ৭ হাজার ৪৬ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১১৫ জন। এদিকে শুধু ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৩ হাজার ৩৪০ জন। মারা গেছেন ১১৪ জন। সেই হিসাবে এই হাসপাতালে ৩০ জনে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
দেশে গত এক দিনে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৯ জন, ঢাকার বাইরে ছয়জন মারা গেছে। একই সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ১০৩ জন। ঢাকায় ৪৩৩ জন, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ৬৭০ জন। গতকাল রবিবার (০৫ নভেম্বর) দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এমন তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই লাখ ৭৯ হাজার ৯০৪ জন। মৃত্যু হলো এক হাজার ৪০৯ জনের। দেশে গত দুই সপ্তাহ ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ডেঙ্গু পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ৬৫৭ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। মৃত্যু হচ্ছে ১০ জনের বেশি। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে গড়ে প্রতিদিন মৃত্যু প্রায় ছয়জনের, আক্রান্ত এক হাজার ২৮২ জন। ঢাকায় গড়ে প্রতিদিন মৃত্যু চারজনের। আক্রান্ত ৩৭৪ জন। অর্থাৎ ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি এখন উদ্বেগজনক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গত ১৫ দিনের (সেপ্টেম্বর ২২ থেকে ০৫ নভেম্বর পর্যন্ত) তথ্য বিশ্লেষণে ডেঙ্গু পরিস্থিতির এমন তথ্য জানা গেছে।