
ভারতের দিকে তাক করা পাকিস্তানের ১৩০ পারমাণবিক বোমা
২৬ অক্টোবর ২০২৩, ২:২৫ অপরাহ্ণ
সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলে গ্যাসের দাম চলতি বছরে বাড়ানো হয়েছিল রেকর্ড হারে। এখন শুরু হয়েছে গ্যাস–সংকট। বাড়তি দাম দিয়ে হলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চেয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। সরকারও বাড়তি গ্যাস কেনার টাকা জোগাড় করতে শিল্পে দাম বাড়িয়েছিল ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, গ্যাসের অভাবে কারখানা পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় গ্যাস না পেয়ে হতাশ ব্যবসায়ীরা। যেমন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের দুটি সংগঠনের ব্যবসায়ীরা বলেন, তিতাসকে অতিরিক্ত দাম দিয়েও এখন গ্যাস পাচ্ছেন না।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এভাবে চলতে থাকলে দেশে কাপড় উৎপাদন না করে বিদেশ থেকে আমদানি করা ছাড়া উপায় থাকবে না। এতে আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে, ডলার–সংকট আরও বেড়ে যাবে। গ্যাসের নতুন সংকট শুরু হয়েছে কিছুদিন ধরে। সরকারি সংস্থাগুলো বলছে, এই সংকট তিন কারণে—১. দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদন কমেছে। ২. শিল্প খাতে কমিয়ে সরকারি সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করতে হচ্ছে। ৩. হঠাৎ কমেছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। কয়েক দিন ধরে গড়ে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৬৫ কোটি ঘনফুট। যদিও দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের কথা। এর মধ্যে এলএনজি থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে দিনে ৬০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু মার্কিন ডলার সাশ্রয়ের জন্য গত বছর জুলাই থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত খোলাবাজার থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ রেখেছিল সরকার। তখন গ্যাস–সংকট বেড়ে যায়। এতে ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করার দাবি জানান। প্রয়োজনে দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রেও সম্মতি দেন।
সরকার গত জানুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ৮০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়, যা ছিল দেশের ইতিহাসে একসঙ্গে সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা। তখন শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত। দাম বাড়ানোর পর ফেব্রুয়ারি থেকে খোলাবাজারের এলএনজি কেনা শুরু করে সরকার। তাই সরবরাহ মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। এখন আবার সংকট বাড়ল।
২০১৮ সাল থেকে দেশে গ্যাস আমদানি শুরু হয়, যা এলএনজি নামে পরিচিতি। বাংলাদেশে দুইভাবে এলএনজি কেনে—ওমান ও কাতারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এবং খোলাবাজার থেকে। খোলাবাজারে দাম কার্যত বেশি থাকে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) দেশে এলএনজি আমদানি করে। তারা সাধারণত শীত সামনে রেখে নভেম্বর থেকে খোলাবাজারের এলএনজি আনা কমিয়ে দেয়। কারণ, এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে বলে ওই খাতে গ্যাসও কম লাগে। এবার নভেম্বর ও ডিসেম্বরে খোলাবাজারের এলএনজি আমদানির কোনো পরিকল্পনা ছিল না।
আরপিজিসিএল সূত্র বলছে, সংকট দেখা দেওয়ায় আগামী দুই মাসে তিন থেকে চারটি এলএনজিবাহী কার্গো আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সমস্যা হলো দুটি এলএনজি টার্মিনালের একটির রক্ষণাবেক্ষণের সময় এসে গেছে। সেটি বন্ধ রাখা হলে সংকট আরও বাড়বে।
দেশে বর্তমানে ২৮টি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে সাধারণত দিনে ২২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়, যা এখন ১৫ কোটি ঘনফুটের মতো কমেছে। গতকাল বুধবার দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা হয়েছে ২০৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন করার জন্য বিশেষজ্ঞরা জ্বালানি বিভাগের অবহেলা ও অদক্ষতাকে দায়ী করেন। তাঁরা বলছেন, কারিগরি পরিকল্পনা ও দক্ষ প্রযুক্তির অভাবে মজুত থাকার পরও উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন কমেছে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস বেশি দিতে হচ্ছে। সার কারখানায় সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। তাই শিল্পকারখানা এখন বেশি ভুগছে। শিল্পকারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র (ক্যাপটিভ) ও বয়লার চালাতে গ্যাস দরকার হয়। গ্যাস না পেলে তাদের উচ্চমূল্যের ডিজেল ব্যবহার করতে হয়। শিল্পকারখানাগুলোর মালিকেরা বলছেন, গ্যাস–সংকটের কারণে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, দেশে এমন কোনো খাত নেই যেখানে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দেয়নি। সরকারের এই আচরণ অসাধু ব্যবসায়ীদের মতো। সরকার ইচ্ছেমতো দাম বাড়াল, কিন্তু কথামতো সরবরাহ না করে গ্যাস–সংকটে রাখা হচ্ছে। বাড়তি দাম দিয়েও প্রয়োজনীয় গ্যাস না পেয়ে হতাশ ব্যবসায়ীরা। এতে দেশে কাপড় উৎপাদন না করে বিদেশ থেকে আমদানি করা ছাড়া উপায় থাকবে না।