
বগুড়ায় ফ্রিল্যান্সারকে অপহরনের দায়ে সাব-ইন্সেপেক্টরসহ পুলিশ আটক
২৪ অক্টোবর ২০২৩, ৮:৪৬ অপরাহ্ণ
বিএনপি ঘোষিত ২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে ঘিরে কর্মসূচি সম্পর্কে দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে যে, এই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও স্বত:স্ফুর্ত। তা সত্বেও কয়েকদিন ধরেই চলছে নির্বিচারে গ্রেফতার। আওয়ামী পন্থী পুলিশ কর্মকর্তারা জনমনে নানা আতঙ্কের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন ক্রমাগত হুমকির মাধ্যমে। দলের নেতাকর্মীদের যেখানেই পাচ্ছে সেখানেই নির্বিচারে আটক করছে পুলিশ, সেই সাথে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারীও। ইতোমধ্যে বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া শুরু হয়েছে। গণতন্ত্রকামী জনগণের আন্দোলনকে দমন করতেই সরকার গ্রেফতার ও সাজা দেয়ার পথ অবলম্বন করেছে।
গ্রেফতারকৃতদেরকে অজ্ঞাতনামা আসামীর জায়গায় নাম বসিয়ে দেয়া হয়। গায়েবী ককটেল আর গায়েবী বিস্ফোরক ধরার গায়েবী মামলায় অধিকাংশ গ্রেফতারকৃতদের নামে অভিযোগ আনা হয়। গায়েবী মামলায় এখন সরকার গায়েবী সাক্ষ্যও চালু করেছে। বানানো সাক্ষীকে গায়েবী সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনকি ফৌজদারী মামলায় পুলিশ সাক্ষী দিতে ইতস্তত: করলে অথবা শেখানো কথা না বললে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশের সদর দপ্তর থেকে। পুলিশ প্রশাসন এখন জনগণের প্রতিষ্ঠান নয়, এটিকে গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকু মুছে দিতে নব্য বাকশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। দেশটাকে চিরতরে আওয়ামী কতৃর্ত্বের অধীনে রাখার জন্য গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনা জনপ্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগকে আওয়ামী লীগের উইং হিসেবে তৈরী করেছেন। সেই কারণে তারা ন্যায়বিচার, সুশাসন এবং চিন্তার স্বাধীনতাকে সমাধিস্থ করেছে।
পুলিশের সর্বগ্রাসী গ্রেফতারী অভিযানের পরও সরকার শঙ্কামুক্ত হতে পারছে না বলেই আনসার বাহিনীকেও বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এটি নজীরবিহীন একটি ঘটনা। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে আওয়ামী কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের মধ্যে চূড়ান্তভাবে বন্দী করা হলো। বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থেই আওয়ামী বন্দীশালা বানানো হলো। আওয়ামী লীগ ক্ষয়িষ্ণু ও দুর্দশাগ্রস্ত একটি দল বলেই এখন আনসারকেও গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খুলনায় বলেছেন—সংবিধান মেনেই জাতীয় নির্বাচন হবে। তার এই বক্তব্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কার্বন কপি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকেও যে শেখ হাসিনা বিচারক, পুলিশ ও প্রশাসনের মতো আওয়ামী ক্যাডারদের দিয়ে সাজিয়ে রেখেছেন আহসান হাবিবের বক্তব্যে তাদের মুখোশ খুলে পড়েছে। এই নির্বাচন কমিশন জনগণের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি বাকশালী প্রতিষ্ঠান, তার বক্তব্যে একতরফা নির্বাচনেরই ইঙ্গিত ফুটে উঠেছে। এই কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই হবে না, এখানে ভোটের নামে 'নির্বাচনবাজী' হবে। সেই কারণেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের প্রচন্ড অনাস্থা। এরা জনগণের নজরদারী নস্যাৎ করে আরেকটি নিশিরাতে ব্যালট বাক্স ভর্তিরই বন্দোবস্ত করছে। আজকে শুধু বাংলাদেশের জনগণের অনাস্থা নয়, বিদেশী কুটনীতিকরাও বাংলাদেশের নির্বাচনের অনুকুল পরিবেশের ঘাটতি দেখছে। অথচ নির্বাচন কমিশন নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার পথরেখাই অনুসরণ করছে।
বাস্তবিকই বাংলাদেশের কারাগারগুলো এখন ভয়াবহ নিপীড়ণ—নির্যাতনের আয়নাঘর। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানের পর রাখা হয় কারাগারের দম বন্ধ করা সেলে। দিনরাত তাদের লকআপে রাখা হয়। ডাকাতী ও খুনের ভয়ঙ্কর অপরাধীরা কারাভ্যন্তরে যে অধিকারটুকু ভোগ করে সেটুকুও বিএনপি নেতাকর্মীদের নেই। কেরানীগঞ্জ কারাগারে শাপলা বিল্ডিংয়ে বেশীর ভাগ বিএনপি নেতাকর্মীদের দিনরাত আটকিয়ে রাখা হয়। পাশাপাশি অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার দেয়া হয় যেগুলো গরু—ছাগলের খাবারের জন্য প্রযোজ্য। নিজের টাকা দিয়ে খাবার কেনারও নিয়ম থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে সেই অধিকারটুকুও দেয়া হয় না।
আইজি প্রিজন হচ্ছেন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের এক বিশ্বস্ত সহচর। তিনি সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে কারাগারে বিএনপি নেতাকর্মীদের গতিবিধি নজরদারি করেন সেলে সার্বক্ষণিক আটকিয়ে রাখার জন্য। নিয়ম অনুযায়ী রাত শেষে সকালে লকআপ খুলে দেয়া হয়। দিনের বেলায় কারাগারের প্রাঙ্গনে বিচরণ করার বিধান আছে, অথচ বিএনপি নেতাকর্মীদের ভাগ্যে সেই সুযোগটুকু এখন নেই। বিএনপি নেতাকর্মীরা যাতে নিদারুণ কষ্ট ও দুর্দশার মধ্যে দিনযাপন করেন, এটিই যেন আইজি প্রিজনের প্রধান কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এই কারাগারকেই মাদক থেকে শুরু করে নানা ধরণের দুর্নীতি, অনাচারের লীলাক্ষেত্র হিসেবে সবাই জানে।
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ—সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) হারুনুর রশিদ হারুন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক, নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহী ও মৎস্যজীবী দল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রনি আকতারকে গতকাল গভীর রাতে তাদের বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আওতাধীন হাজারীবাগ থানার ২২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ ফারুক, শাহবাগ থানাধীন ২১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশিদ, ২০ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মোঃ ফজল, মোঃ মোখলেছ, গেন্ডারিয়া থানাধীন ৪৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শাহীন আলম ও ডেমরা থানা শ্রমিকদলের সদস্য সচিব মোঃ মাজহার, খিলগাও থানাধীন ৭৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ—সভাপতি মজিবুর রহমান, ডেমরা থানাধীন ৬৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ—সভাপতি মোঃ ছাবেদ আলী মেম্বার, ধানমন্ডি থানার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক উদ্দিন ভূঁইয়া, ১৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মামুন হোসেন, ২১ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মোঃ ছিদ্দিক, ২০ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মোঃ ইমরান, মোঃ সাইফুল, বংশাল থানাধীন ৩৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মোঃ আসলাম, রমনা থানাধীন ১৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুল মোতালেব রুবেল, সবুজবাগ থানাধীন ৭৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ—সভাপতি মজিবর রহমান, সহ—সভাপতি নুরুজ্জামান ও শাহজাহানপুর থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব এইচ কে হোসেনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।
ঢাকা মহানগর উত্তরের আওতাধীন বিমানবন্দর থানা বিএনপির সদস্য মানছুর আহমদ মানছুর, বাড্ডা থানার ৩৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান রুবেল, গুলশান থানার ১৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মোঃ পিপলু, রূপনগর থানা বিএনপির যগ্ম আহ্বায়ক মোঃ শিরু মিয়া ও উত্তরা—পশ্চিম থানাধীন ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ—সভাপতি জহিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লা, বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি নূর মোহাম্মদ, সদর থানা বিএনপির সাবেক সদস্য ফয়সাল আহমেদ, ফতুল্লা থানা বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদ হারুন, আড়াই হাজার উপজেলা বিএনপির সহ—সভাপতি এ্যাড. খোরশেদ মোল্লা, এ্যাড. সিদ্দিক, সদস্য মোঃ সামসুল হক, ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হোসেন মুন্সি, ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বাবু, বিএনপি নেতা মোঃ মাসুদ, ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ—সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ খোরশেদ আলম, কুতুবপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এ্যাড. তরিকুল ইসলাম তারেক, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, ফতুল্লা থানা যুবদলের আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান মাসুদ, ২ নং ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল মিয়া, সহ—সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রাজ্জাক, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সদস্য মোঃ হারুন, মহানগর যুবদল নেতা মেহেদী, জাহিদ, ৮ নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা রানা, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ রাকিব হাসান, ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলী মিয়া, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ফরহাদ খন্দকার, ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ডাক্তার মনির হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ আতাউর রহমান, রূপগঞ্জ থানা জাসাসের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সাত্তার চৌধুরী, সোনারগাও পৌর বিএনপির সদস্য মোঃ হুমায়ুন, জেলা শ্রমিকদলের সদস্য মোঃ কামাল হোসেন, ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক মোঃ দুলাল হোসেন, বিএনপি নেতা মোঃ সোহেল, ১০ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মোঃ শফিকুল ইসলাম শফিক ও রূপগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মোঃ কাউসার মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মহাসমাবেশকে সামনে রেখে গত কয়েকদিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরে বিএনপি ও এর অঙ্গ—সহযোগী সংগঠনের নেতাকমীর্দের বাড়িতে বাড়িতে গভীর রাতে ডিবি পুলিশের বিশেষ টিম তল্লাশির নামে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সালাউদ্দিন সালু ও জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমানের বাড়িতে ডিবি পুলিশ হানা দিয়ে বাড়ির দরজা ও জানালা ভেঙ্গে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে, তাদের না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের হুমকি—ধামকি প্রদর্শন করে।
গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাবিবুর রহমান রুইন এবং মুন্সিগঞ্জ জেলাধীন ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা ও সাবেক কমিশনার মোঃ দেলোয়ার সরকার জীবনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আমি গ্রেফতারকৃত সকল নেতৃবৃন্দের মুক্তি এবং সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবী জানাচ্ছি।
গত ২৮ ও ২৯ জুলাই ২০২৩ তারিখ হতে অদ্যাবধি বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী:— মোট আহত: ১৯৯৫ জন,মোট মামলা: ৩৯৮ টি, মোট গ্রেফতার: ৩৪৮০ জন, মোট আসামী: ২৬,৫৬০ জন।