শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

ভিআইসি সহ দেড়শতাধিক প্রকল্পের উদ্ধোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন


১৯ অক্টোবর ২০২৩, ৩:১২ অপরাহ্ণ 

ভিআইসি সহ দেড়শতাধিক প্রকল্পের উদ্ধোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা |

  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সড়ক নিরাপত্তার উন্নয়নের অংশ হিসেবে মিরপুরস্থ বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেলে নবনির্মিত ১২ লেন বিশিষ্ট স্বয়ংক্রিয় মোটরযান ফিটনেস পরীক্ষা কেন্দ্র (ভিআইসি) স্থাপন করেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেজগাঁওস্থ সড়ক ভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এটি উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সৈয়দ মঈনুল হাসান, বেগম রওশন আরা মান্নান, জনাব আসাদুজ্জামান খান ও গন্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গরা।

আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫০টি সেতু ও ১৪টি ওভারপাস, ডিটিসিএ ভবন, ময়মনসিংহ কেওয়াটখালি সেতু এবং রহমতপুর সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং বিআরটিসি’র ময়মনসিংহ বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভাষণ এবং উন্নয়নমূলক কাজের শুভ উদ্ধোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে হলে দক্ষ ড্রাইভারের পাশাপাশি দক্ষ প্রশিক্ষণও প্রয়োজন। আমরা যে মহাসড়কগুলো করছি সেখানে অন্ত্যত কয়েক কিলোমিটার পরপর যেন ড্রাইভার বিশ্রাম নিতে পারে সেজন্য বিশ্রামগারের কথা বলা হয়েছে পর্যায়ক্রমে আরো করে দিবে। আবার আমরা যারা ড্রাইভার ব্যবহার করছি তাদের অনুরোধ করবে “গাড়ি চালাতে যেমন পেট্রোল লাগে, কিন্তু যাকে দিয়ে চালাবেন তারও তো পেট্রোল  প্রয়োজন”। তাই ড্রাইভারদের বিশ্রাম ও ঠিকমত খাচ্ছে কি না তা খেয়াল রাখা অন্ত্যত প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, মহাসড়কে যে দূরপাল্লার গাড়িগুলো যাচ্ছে সে পরিবহনস্তর ও নিরাপদ সংস্থার জন্য ১ হাজার ২ শত বাস ও ট্রাক কভার করা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলট, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-খুলনা, মহাসড়কে কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ সড়কে বাস ও পন্যবাহী ট্রাক ড্রাইভারদের বিশ্রামের জন্য ইতিমধ্যে ৪টি বিশ্রামগারের কাজ শুরু হয়েছে।

সড়ক ও জনপদ অধিদফতরের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২১২ কোটি টাকা ব্যয় করছে। বিআরটিএর প্রস্তাব অনুযায়ী, কেন্দ্রটি ৫ বছরের জন্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে এবং মেয়াদ শেষে বিআরটিএর কাছে হস্তান্তর করা হবে। দেশের ৮টি বিভাগে মোট ৩৯টি জেলায় উদ্বোধন হতে যাওয়া ১৫০টি নতুন সেতু ও ১৪টি ওভারপাসের অবস্থান। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে রয়েছে ৪০টি সেতু, ঢাকা বিভাগে ৩২টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৭টি ও রাজশাহী বিভাগে ২২টি সেতু। এছাড়াও খুলনা বিভাগে রয়েছে ১২টি সেতু, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে রয়েছে ৮টি করে সেতু এবং সিলেট বিভাগে উদ্বোধন হচ্ছে একটি সেতু। এ ১৫০টি সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৯.৪৫ কিলোমিটার। উত্তরবঙ্গের যানজট নিরসনে ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়কসহ (এন-৫) বেশ কয়েকটি মহাসড়কে নির্মিত ১৪টি ওভারপাসের মধ্যে ৮টি অবস্থিত রাজশাহী বিভাগে আর ৬টির অবস্থান রংপুর বিভাগে। এ ১৪টি ওভারপাসের মোট দৈর্ঘ্য ৬৮৯ মিটার।

বিআরটিএ মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, রুট পারমিট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে। বিআরটিএ কর্মকর্তারা মনে করছেন, ভিআইসি সারাদেশে সড়ক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে সাহায্য করবে। আসলে কি ভিআইসি সারাদেশে সড়ক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে সাহায্য করবে? একটি মোটরযান সড়কে চলার উপযোগী কি না তা জানতে কমবেশি ৬৪টি জিনিস পরীক্ষা করে দেখা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ খালি চোখে পরীক্ষা করা যায় না। তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সেটাই করছে। এতে পরিবেশদূষণকারী ও চলাচলের অযোগ্য যানবাহন সড়কে চলার অনুমতি পেয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া অনুমাননির্ভর এসব ফলাফল তৈরিতে সংশ্লিষ্টদের কারসাজি ও অবৈধ লেনদেনও হয়ে থাকে। আর এসব সমস্যা দূর করতে আগামীকাল (১৯ অক্টোবর) মিরপুর-১৩ বিআরটিএর কার্যালয়ে চালু হচ্ছে একটি ১২ লেনের স্বয়ংক্রিয় মোটরযান পরীক্ষাকেন্দ্র, যা যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র (ভিআইসি) নামে পরিচিত।

নতুন এ পরীক্ষাকেন্দ্রে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মোটরযানের হেডলাইট, গতি, ধোঁয়া, ব্রেক, সাসপেনশনসহ সব ধরনের ফিটনেস পরীক্ষা করা হবে। প্রতিটি ধাপের ফল আলাদাভাবে এবং চূড়ান্ত ফল স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রস্তুত করা হবে। পরে একটি কপি গ্রাহকের মেইলে চলে যাবে।
জানা যায়, ২০২১ সালে এ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। এ কেন্দ্রের ভবন নির্মাণে ব্যয় হয় ১৬ কোটি টাকা। আর যেসব যন্ত্রপাতি দরকার তা সরবরাহ ও পাঁচ বছর পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্ব পেয়েছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম নামে একটি বেসরকারি কোম্পানি। তাদের এ পাঁচ বছর মোট ১৫ লাখ যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা বাবদ ১০৫ কোটি টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে।

কর্মকর্তারা আরও জানান, পাঁচ বছর পর এ কেন্দ্র পরিচালনা ও রক্ষণাক্ষণের দায়িত্ব বিআরটিএ নিতে পারে বা আবারও খোলা দরপত্রের মাধ্যমে নতুন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করতে পারে।

এ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০টি বিভিন্ন প্রকারের গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করানো যাবে। এর মাধ্যমে ফিটনেস প্রদান করা হলে মোটরযান থেকে পরিবেশদূষণ হ্রাস করা সম্ভব হবে। তবে ত্রুটিযুক্ত যানবাহন ফিটনেস সনদ পাবে না, ফলে সড়কে দুর্ঘটনা কমবে। এ কেন্দ্রের মাধ্যমে ডিজিটাল সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করবে এবং সিস্টেমে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।