ফরিদপুর জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে লিফলেট বিতরণ ও জনসংযোগ অনুষ্ঠিত
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৫
১২ অক্টোবর ২০২৩, ৪:১৮ অপরাহ্ণ
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। যে জাতী শিশুর প্রতি মনোযোগী নয় যে জাঁতি কোন দিন বড় হতে পারে না। প্রতিটা শিশুই তার দেশ ও জাতির অগ্রনায়ক। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে অনেক পথশিশু তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পথশিশুরা সাধারণত টোকাই নামেই পরিচিত। জন্মগতভাবে কেউই পথশিশু বা টোকাই নামে জন্মগ্রহণ করে না। এই শিশুদের পথশিশু বা টোকাই নামের পিছনে লুকিয়ে থাকে দীর্ঘ কাহিনী।
ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই ওরা অনাদর, অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার হয়ে থাকে। এই পথশিশুরা বেশির ভাগই তৈরি হয় পারিবারিক কলহের কারণে। বাবা মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ, সংসারে অতিরিক্ত অভাব, বাবা-মায়ের দূরারোগ্য ব্যাধি কারণে শিশুরা অল্প বয়সে রাস্তায় নেমে আসে। আবার কখনোও দেখা যায় যে শিশুদের চুরি করে নিয়ে এসে রাস্তায় ছেড়ে দেয় ভিক্ষা করে অর্থ উপার্জনের জন্য। অনেককে এ কাজে বাধ্য করা হয়, ফলে অনেক অবৈধ সন্তানও বড় হয়। রাস্তার পাশে জেগে উঠা আবর্জনার স্তূপ, বাস টার্মিনাল-রেলস্টেশন এখানে-সেখানে নোংরা অপরিচ্ছন্ন স্থানটুকুই আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নেয় তারা। তবে তাদের কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। কাগজ কুড়ানো কিংবা ভিক্ষাবৃত্তি, টোকাই দিয়েই ওরা জীবন শুরু করে এবং পথেই কাটে তাদের সারাটা জীবন।
পথশিশুদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত হয়ে গড়ে ওঠে এবং মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে তারা রাস্তাতেই মারা যায়। আবার কেউ কেউ পাচারের শিকার হয়। যারা পাচারের শিকার হয়, তাদের অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিক্রি করে দেয়া হয় এবং নির্যাতনেরও শিকার হয়ে থাকে। যারা মেয়ে তারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয় এবং যৌনকর্মী হতে তাদেরকে বাধ্য করা হয়।
করোনাকালীন সময়ে পথশিশুদের অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। লকডাউন থাকায় রাস্তায় লোকজনের চলাচল কমে যাওয়ার কারণে তাদের আরো বেশি অসুবিধা হচ্ছে, ঠিকমতো খেতেও পারছে না। কারণ পথশিশুদের একটা বিরাট অংশ ভিক্ষা করে খায় আবার কিছু অংশ ফুল, বেলুন, চকলেট ইত্যাদি বিক্রি করে চলে। কিন্তু লোকজন কম থাকার কারণে তারা এসব করতে পারছে না। অনাহারে চলছে তাদের জীবন।
করোনা কালীন সময়ে বা অন্যান্য যে কোনো সময়ে দেখতে পাই কিছু পথশিশু তাদের মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে। তারপর তাদের জীবন পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাদের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হচ্ছে না। তারা সরকারি ভাবে এমনকি বেসরকারিভাবেও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু অন্যান্য পথশিশু যারা ভাইরাল হচ্ছে না তাদের কথা কেউ ভাবছে না। তারা কোনো সুযোগ সুবিধাও পাচ্ছে না। তাদের জীবনের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তার কোনো খবর কেউ রাখছে না। তাদের জন্যও প্রয়োজন স্থায়ীভাবে কোনো কিছু করা, তাদের সুন্দর জীবনযাপনের ব্যবস্থা করা। তারাও সমাজের অন্যদের মতো মানুষ। পথশিশু ভেবে তাদেরকে অবহেলা অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। পথশিশুদের পূণর্বাসন ও জীবনমানের উন্নয়ন যত তাড়াতাড়ি করা যাবে ততই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলকর হবে।
তবে ঢাকা শহরে সরকারি ও বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ আছে এই পথশিশুদের জন্য। কিছু সংগঠন তাদের খাবার দিচ্ছে, পোশাক দিচ্ছে, প্রাথমিক শিক্ষা দিচ্ছে, আবার অনেক সংগঠন তাদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থাও করছে। তবে দিনশেষে তাদের আবার সেই পথেই নামতে হয়। কারণ এসকল উদ্যোগগুলোর কোনোটাই টেকসই নয়। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের মতে, এসব কার্যক্রমে পথশিশুদের কোনো উন্নতি করা সম্ভব নয়।
এনজিও কর্মকতা ইনজামুল হকের মতে, প্রথমেই পথশিশুদের প্রয়োজন স্থায়ী থাকার জায়গা। এরপর খাবার, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদা। যা একমাত্র সরকারি উদ্যোগেই নিশ্চিত করা সম্ভব।
দেশের অধিকাংশ মানুষ চায় পথশিশুর জীবনমান উন্নতি হোক। তাই দেশের কল্যাণের জন্য হলেও পথশিশুদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। তাদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই এ সম্পর্কে সরকারকে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান সচেতন নাগরিকরা।