বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করবেন যেভাবে


গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করতে ক্রেতা এবং বিক্রেতার যা যা লাগবে।

৭ অক্টোবর ২০২৩, ৫:৩৮ অপরাহ্ণ 

গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করবেন যেভাবে
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন বা গাড়ির মালিকানা বদলি। আপনি/আপনারা যে কেউ গাড়ি ক্রয় করার ক্ষেত্রে প্রথমেই যে কাজটি করবেন তাহলো গাড়ির বৈধতা যাচাই। আপনি যে গাড়িটি কিনতে চাচ্ছেন সেটির বৈধ মালিক কে এবং গাড়িটির সকল কাগজ পত্র ঠিক আছে কিনা। তাছাড়াও গাড়িটির চলতি মেয়াদ পর্যন্ত সকল ফি হালনাগাদ আছে কিনা তা ভাল ভাবে দেখে নিন। কেননা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক প্রতারক চক্র গাড়ি বিক্রির সাথে জড়িত হয়ে ১ টি গাড়ি একাধিক ব্যাক্তির কাছে নাম মাত্র ১০০ বা ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে সই নিয়ে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে বিশাল অংকের টাকা। এজন্য দায়ী আমাদের অসচেনতা বা অসাবধানতা। গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনে এ ভুল টি কখনই করা যাবে না। কেননা একটি গাড়ি মানে, একটি পরিবারের স্বপ্ন।     

সেকেন্ড হ্যান্ড বা পুরনো গাড়ি ক্রয় বিক্রয়ের সময় গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করতে গেলে কিছু আইনি জটিলতা দেখা দেয়। কিন্তু আইনগতভাবে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করা থাকলে অনেকটাই ঝামেলা মুক্ত থাকা যায়।

ধরুন আপনার বিক্রিত গাড়ি নিয়ে ক্রেতা কাউকে অপহরণ করলো কিংবা গাড়িতে করে মাদক বহন করলো। আর পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ভয়ে সে গাড়ি রেখে পালালো। পুলিশ গাড়িটি জব্দ করলো। যাচাই করে দেখা গেল গাড়িটি আপনার নামে রেজিস্ট্রেশন করা। তখন কিন্তু আপনি আইনী জটিলতায় ফেঁসে গেলেন। অথবা আপনি গাড়ি কিনলেন, কিন্তু মালিকানা পরিবর্তন কাজটি সম্পূর্ণ করেন নি। এ ক্ষেত্রে বিক্রেতা যদি কোন প্রতারক চক্রের সদস্য হয়। আর যদি সে আপনার নামে গাড়ি চুরির মামলা করে। তাহলেও কিন্তু আপনি বিপদে পড়বেন।

আর এসব সমস্যা এড়াতে গাড়ি ক্রয় করার সাথে সাথে অবশ্যই গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পূর্ণ করা উচিত।

এখানে আমরা গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করতে ক্রেতা এবং বিক্রেতার যা যা প্রয়োজন তা তুলে ধরেছি। 
 

মালিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ক্রেতার যা যা প্রয়োজন:

১. ফর্ম টিও এবং টিটিওঃ 

গাড়ি কেনার সময় প্রথম যে কাগজটি প্রয়োজন সেটি হল টিও ফর্ম (Trasfer of Ownership) সংগ্রহ করা যা আপনি অফিস বা অনলাইন দুইভাবেই করতে পারেন। বিআরটিএ ওয়েবসাইট থেকে এই ফর্ম দুটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।  টিওতে ক্রেতার স্বাক্ষর এবং টিটিওতে ক্রেতার ২ টি নমুনা স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে। 

 ২. মালিকানা ফিঃ 

মালিকানা পরিবর্তনের ফি এর ক্ষেত্রে গাড়ির ধরন বা সি সির উপর টাকা কম বেশি হয় আর সে জন্য জমা দেয়ার কাজটি বিআরটিএ অফিসে গিয়ে জেনে নিয়ে করলে ভাল হয় পাশাপাশি অনেক কাজ একসাথে করা সম্ভব। যে সকল ব্যাংকের মাধ্যমে বি আর টি এ এর গাড়ির ফি জমা দেওয়া যায় সেই ব্যাংকের কর্মকর্তার কাছে ব্লু বুকের কপি জমা দিয়ে ফি জমা দেয়ার রশিদ নিতে হবে। গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের জন্য নির্ধারিত ফি জমা দান শেষে রশিদের মূলকপি বিআরটিএ তে গাড়ির অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে যুক্ত করে জমা দিতে হবে।

 ৩. ক্রেতার কাগজপত্রঃ  

টিন সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, বর্তমান ঠিকানার ফোন বা বিদ্যুৎ বিলের সত্যায়িত ফটোকপি এবং নিজ নামে নিবন্ধিত মোবাইল নাম্বার  ইত্যাদি। মনে রাখবেন উল্লেখিত কাগজপত্র ছাড়া কখনো কোন ধরনের গাড়ি রেজিস্ট্রেশন/মালিকানা পরিবর্তন করা সম্ভব না।

৪. সত্যায়িত কাগজপত্রঃ

ফিটনেস ও রুট পারমিট হচ্ছে গাড়ির একটি অন্যতম জরুরী বিষয়। আর এই পারমিটের জন্য মূল রেজিস্ট্রেশনের ফটোকপি, ডিজিটাল সার্টিফিকেট, নতুন ট্যাক্স টোকেনের সত্যায়িত কপি ইত্যাদি প্রদান করতে হয়। 

৫. চিঠিঃ  

ক্রেতা যদি ব্যাক্তিগত ব্যাবহারের জন্য গাড়িটি ক্রয় করে তাহলে সাধারন ফর্ম আর ক্রেতা যদি প্রাতিষ্ঠানিক কাজে গাড়ি ব্যাবহার করে তাহলে অফিসিয়াল প্যাডে বিআরটিএ সহকারী পরিচালক বরাবর চিঠি প্রদান করতে হবে। ছবিসহ জুডিশিয়াল ফর্ম অথবা নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে হলফনামা দাখিল করতে হবে। 

৬. ইংরেজি ব্লক লেটারঃ 

দাখিল করার সময় সবকিছু ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে লিখতে হবে। নির্দিষ্ট নমুনা স্বাক্ষর ফর্মে ক্রেতার নমুনা স্বাক্ষর ও ৩ কপি রঙিন স্ট্যাম্প সাইজ ছবি প্রদান করতে হবে।

৭. সরেজমিনে গাড়ি পরিদর্শনঃ  

মালিকানা পরিবর্তনের জন্য গাড়িটি বিআরটিএ অফিসে অবশ্যই নিয়ে আসতে হবে। একজন মোটরযান পরিদর্শক আপনার গাড়িটি দেখে সব কিছু যাচাই সাপেক্ষে ফাইলে সই করবেন তার পরবর্তী বাকি কাজ সম্পন্ন করবেন এবং সবশেষে আপনাকে মালিকানা স্লীপ বুঝিয়ে দেবেন।   

৮. স্বাক্ষর গরমিলঃ 

স্বাক্ষর সবসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সব জায়গায় স্বাক্ষর করার আগে ভাল ভাবে সব মিলিয়ে নিতে হবে। যার স্বাক্ষরে অমিল থাকবে তাকে বিআরটিএর অফিসে সশরীরে আসতে হবে। এজন্য বিক্রেতাকে সবসময় সাথে নিয়ে গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করার কাজটি শেষ করা উচিৎ। এতে করে অনেক অহেতুক ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

 

মালিকানা পরিবর্তনের বিক্রেতার যা যা প্রয়োজন

(ক)  টিটিও ফর্মঃ 

বিক্রেতা হিসেবে ফর্ম টিটিও ও বিক্রয় রশিদ অফিস থেকে সংগ্রহ করে বিক্রেতা ও রাজস্ব স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে হবে।

(খ)  ফিঃ  

ছবিসহ একটি জুডিশিয়াল ফর্ম হচ্ছে ২০০ টাকা আর নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে হলফনামা দাখিল করতে হয়, বিক্রয় সংক্রান্ত হলেই শুধু এই প্রক্রিয়াটি হবে।

(গ)  সার্টিফিকেট জমাঃ 

বিক্রেতা সাধারন হলে সাধারন চিঠি কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক হলে অবশ্যই যে কোম্পানির নামে গাড়ির মালিকানা হবে সেই কোম্পানির হেড প্যাডে ইণ্টিমেশন, বোর্ড রেজুলেশন, অথরাইজেশনপত্র প্রদান করতে হবে। 

(ঘ)  চিঠিঃ 

বিক্রিত গাড়িটি যদি কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কেনা হয় তাহলে অবশ্যই সেই ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত ছাড়পত্র(No objection certificate), ব্যাংক লোন স্টেটমেন্ট (Bank Loan Statement) এবং ব্যাংক কর্তৃক সহকারী পরিচালক বিআরটিএ বরাবর অনুরোধপত্র/চিঠি দাখিল করতে হবে।

(ঙ)  জাতীয় পরিচয়পত্রঃ 

বিক্রেতাকে অবশ্যই একজন বাংলাদেশি বৈধ নাগরিক হতে হবে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে এবং গাড়ি বিক্রির সময় তা দেখাতে হবে এমনকি নিজ নামে নিবন্ধিত মোবাইল নাম্বার থাকতে হবে কেননা মালিকানা সংক্রান্ত কোন জটিলতা দেখা দিলে বিআরটিএ অথরিটি আপনাকে ফোন করতে পারে। 

(চ)  স্বাক্ষর গরমিলঃ 

স্বাক্ষর প্রদানের সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন স্বাক্ষর কোন গরমিল না হয়। কারন যার স্বাক্ষরে গরমিল হবে তাকেই সশরীরে বিআরটিএ  অফিসে এসে স্বাক্ষর দিয়ে প্রমাণ দেখাতে হবে। একজন বিক্রেতা হিসাবে নিশ্চয়ই এটি আপনি চান না? অন্যদিকে আপনার স্বাক্ষর গরমিলের কারনে ক্রেতার ভোগান্তি হবে আকাশচুম্বী।   

পরিশেষে বলতে চাই-দেখে শুনে/জেনে বোঝে গাড়ি ক্রয় করুন এবং বিক্রেতাকে সাথে নিয়ে উভয়ে সশরীরে হাজির হয়ে বিআরটিএ  অফিসে এসে স্বাক্ষর করুন। মনে রাখবেন গাড়ি মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া পুরোপুরি সম্পূর্ণ না করলে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ই বিভিন্ন আইনি জটিলতায় পরতে পারেন।