জাজিরা থানার ওসি আল আমিনের রহস্যজনক মৃত্যু: মরদেহ ঝুলছিল শয়নকক্ষের জানালার সঙ্গে
সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫
৪ অক্টোবর ২০২৩, ২:৪১ অপরাহ্ণ
লালবাগ কেল্লা প্রাক্তন নাম আওরঙ্গবাদ কেল্লা। এটি একটি অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ স্থাপনা। বর্তমানে “জাদুঘর ও ঐতিহাসিক নিদর্শন লালবাগ কেল্লা” ঢাকা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১৬৭৮ সালের মুঘল সুবেদার মুহাম্মদ আজম শাহ আমলে এবং নির্মাণ কাজ থেমে যায় আনুমানিক ১৬৮৪ সালে মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খাঁর আমলে।
লালবাগ কেল্লার ইতিহাস:
সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র, মুঘল রাজপুত্র আজম শাহ বাংলার সুবেদার থাকাকালীন ১৬৭৮ সালে লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তিনি বাংলার ১৫মাস শাসক ছিলেন। মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য দুর্গের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই তার পিতা সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান। এসময় একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর দুর্গ নির্মাণের কাজ থেমে যায়। শায়েস্তা খাঁ পুনরায় বাংলার সুবেদার হিসেবে ঢাকায় এসে দুর্গের নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ১৬৮০ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করলেও শেষ করতে পারেনি। কারণ ১৬৮৪ সালে শায়েস্তা খাঁর কন্যা ইরান দুখত রাহমাত বানুর(পরী বিবি) মৃত্যু ঘটে। কন্যার মৃত্যুর পর শায়েস্তা খাঁ দুর্গটিকে অপয়া মনে করেন। ১৬৮৪ সালে নির্মাণকাজ অসমাপ্ত অবস্থায় বন্ধ করে দেন। লালবাগ কেল্লা তিনটি প্রধান স্থাপনার মধ্যে অন্যতম একটি হল পরী বিবির সমাধি। যা শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ত্যাগ করার পর জনপ্রিয়তা হারায়। ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত রাজধানী স্থানান্তর করা হয়েছিল, এটি ছিল প্রধান কারণ। রাজকীয় মুঘল আমল সমাপ্ত হওয়ার পর দুর্গটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়ে যায়। ১৮৪৪ সালে “আওরঙ্গবাদ” নাম পরিবর্তন হয়ে “লালবাগ দুর্গে” পরিণত হয়।
লালবাগ কেল্লার অবকাঠামো:
দীর্ঘ সময় ধরে ধারণা করা হত, দুর্গটি তিনটি ভবন স্থাপনার সমন্বয় (মসজিদ, পরী বিবির সমাধি ও দেওয়ান-ই-আম) এর সাথে দুইটি বিশাল তোরণ ও আংশিক ধ্বংস প্রাপ্ত মজবুত দুর্গ প্রাচীর। কেল্লাটির কেন্দ্রীয় এলাকা দখল করে আছে এই তিনটি প্রধান ভবন। পূর্বে দেওয়ান-ই-আম ও হাম্মাম খানা, পশ্চিমে মসজিদ এবং পরী বিবির সমাধি দুটোর মাঝখানে এক লাইনে, কিন্তু সমান দূরত্ব নয়। নির্দিষ্ট ব্যবধানে কয়েকটি ফোয়ারা সহ একটি পানির নালা তিনটি ভবনকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে ও উত্তর থেকে দক্ষিণে সংযুক্ত করেছে। এছাড়াও লালবাগ কেল্লায় রয়েছে একটি গভীর সুরঙ্গ। কথিত আছে এক সময় এই সুরঙ্গ দিয়ে বুড়িগঙ্গার অপর তীরে যাওয়া যেত।
দেওয়ান-ই-আম:
দেওয়ান-ই-আম হচ্ছে দরবার হল। যেটি মূলত প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এই ভবনটি আওরঙ্গজেবের তৃতীয় রাজপুত্র আজম শাহ সময়ে নির্মিত হয়েছিল। এই ভবনের ভেতরে একটি হাম্মাম খানা রয়েছে। হাম্মাম খানা মূলত সুবেদারদের বাস ভবন হিসেবে ব্যবহার হত। এই দালান কে দুটি কাজে ব্যবহার করা হত, যার মধ্যে একটি হলো “হাম্মাম খানা (বাস ভবন হিসেবে)” ও অন্যটি “দি ওয়ানে-আম (বিচারকার্য হিসেবে)”। এই দালানের নিচ তলা ছিল হাম্মাম খানা এইখানে শায়েস্তা খাঁ বাস করতেন। আর উপরের তলা ছিল দি ওয়ানে-আম, এখান থেকে তিনি সমস্ত বিচারকার্য পরিচালনা করতেন।
পরীবিবির সমাধি:
লালবাগ কেল্লা স্থাপনের মধ্যে এটি অন্যতম। এখানে পরী বিবি সমাহিত আছে। কন্যার স্মরণে এই মনমুগ্ধকর মাজারটি নির্মাণ করেন। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র শাহজাদা আজম শাহের সাথে ১৬৬৭ সালে ৩ মে পরী বিবির বিয়ে হয়। ১৬৮৪ সালে পরী বিবির অকালমৃত্যুর পর তাকে নির্মাণাধীন লালবাগ কেল্লার অভ্যন্তরে সমাহিত করা হয়। তার সমাধীস্থলকে চিহ্নিত করে পরী বিবির মাজার নির্মিত হয়। স্থাপনাটির অভ্যন্তর ভাগ সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে আচ্ছাদিত ছিল। ২০.২ মিটার বর্গাকৃতির এই সমাধিটি ১৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে নির্মিত। তবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত বর্তমানে এখানে পরী বিবির মরদেহ নেই।
শাহী মসজিদ:
শাহী মসজিদ যা মুঘল আমলে তিন গম্বুজওয়ালা দুর্গ মসজিদ নামে আখ্যায়িত ছিল। সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র শাহজাদা আজম শাহ বাংলার সুবেদার থাকাকালীন এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন ১৬৭৮-৭৯ খ্রিষ্টাব্দে। আয়তাকারে (১৯.১৯ মি: × ৯.৮৪ মি) নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি এদেশের প্রচলিত মুঘল মসজিদের একটি আদর্শ উদাহরণ। বর্তমানেও মসজিদটি মুসল্লিদের নামাজের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
লালবাগ কেল্লা বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। ঢাকার যতগুলো ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে লালবাগ দুর্গ তার মধ্যে ইতিহাস ও উৎকর্ষতার দিক দিয়ে অন্যতম। সুবেদার শায়েস্তা খাঁ, মুঘল স্থাপত্যশৈলীর নান্দনিকতা, কন্যার প্রতি পিতার অপরিসীম ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি, সিপাহি বিদ্রোহ ও সুউচ্চ দুর্গ প্রাচীর এসব কিছুর কারণে লালবাগ কেল্লা বিখ্যাত।