
তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা
১ অক্টোবর ২০২৩, ১:২৮ অপরাহ্ণ
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থান এবং দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে রাজনীতিতে নানা ধরনের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সরকারের পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনে অক্টোবরেই একটা চূড়ান্ত দফারফায় পৌঁছাতে চায় বিএনপি। সেই লক্ষ্য থেকে দলটি ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ, ঘেরাও ও অবরোধের মতো কর্মসূচি চিন্তায় রেখেছে। আর সরকার ও আওয়ামী লীগ যেকোনো মূল্যে যথাসময়ে নির্বাচন করার অবস্থানে থেকে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক শক্তি নিয়ে মাঠে থাকার পরিকল্পনা নিয়েছে।
চলতি অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ কিংবা নভেম্বরের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ অবস্থায় বিএনপি চাচ্ছে তফসিল ঘোষণার আগেই আন্দোলনের মাধ্যমে সাফল্য পেতে। আর আওয়ামী লীগ চাচ্ছে যেকোনোভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করতে। তাই রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকা ক্ষমতাসীন দল ও বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী জোট অক্টোবর মাসকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
কোনো পক্ষ থেকেই ছাড় দেওয়ার কোনো ইঙ্গিত নেই, বরং অক্টোবর মাসেই রাজধানীর রাজপথ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চিন্তা থেকে কর্মসূচি সাজাচ্ছে বিরোধী দল বিএনপি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক চাপ থাকলেও আওয়ামী লীগ ঢাকার মাঠের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পাল্টা কৌশল ঠিক করার কথা বলছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হুমকিতে অক্টোবরে রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে, এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে মানুষের মধ্যে।
আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নভেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণা করার কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন। এর আগের মাস অক্টোবরে মাঠে ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা করবে বিএনপি। কারণ, ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এখন তাদের আন্দোলনকে অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে দেখছে। আওয়ামী লীগ সরকার যদি তাদের মতো করে নির্বাচন করতে পারে, সেটি হবে বিএনপির জন্য চরম বিপর্যয়। সে জন্য দলটি সর্বশক্তি দিয়ে এখন মাঠে নামার কথা বলছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গতকাল শনিবার বলেন, অক্টোবর মাসটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ তো এখন একটি দিনও অপেক্ষা করতে রাজি নয়। তাদের ধৈর্যের সীমা হারিয়ে গেছে।
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের জন্যও এবারের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেক প্রশ্ন থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার তাদের মেয়াদ পুরো করছে। তবে এবারের নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোটের আন্দোলনের চাপ যেমন রয়েছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। দেশি-বিদেশি চাপের মুখে নমনীয় হলেই পরাজয় হবে এবং আওয়ামী লীগ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। ফলে যথাসময়ে নির্বাচন করার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দিক থেকেও পুরো শক্তি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা ক্ষমতাসীন দলের।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গতকাল বলেন, পরিস্থিতি আমরা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করব। যথাসময়েই নির্বাচন হবে। কেউ যাতে নির্বাচন বানচাল করে কোনো শূন্যতা সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সজাগ থাকবেন। আমাদের কিছু ভুলত্রুটি থাকলেও সামগ্রিক বিবেচনায় মানুষ আমাদের সমর্থন করবে।
৫ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে রোডমার্চ করে বিএনপি তাদের এই ধাপের কর্মসূচি শেষ করবে। এর পর ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচি দিতে পারে দলটি। সেই কর্মসূচি কেমন হবে তা নিয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
তবে অক্টোবরের কোন দিন কী কর্মসূচি হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। কয়েক দিনের মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।
বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অক্টোবরের কর্মসূচির বিষয়ে দলে নানা ধরনের প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ, মহাসমাবেশ, সচিবালয় ঘেরাও, অবরোধ বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা উল্লেখযোগ্য। এখন পর্যন্ত কর্মসূচি চূড়ান্ত না হলেও এবারের কর্মসূচিগুলো আগের চেয়ে কঠোর হবে।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, অক্টোবরের কর্মসূচি ঘিরে সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী ভূমিকা নেয়, সেটি তাঁরা দেখবেন। তাঁরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি কার্যকরের ঘোষণার প্রেক্ষাপটে সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-কর্মসূচিতে বড় ধরনের বাধার সৃষ্টি করবে না। এই সুযোগ নিয়ে ঢাকায় শান্তিপূর্ণ গণ-অভ্যুত্থান পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি।
কিন্তু কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি দলের দিক থেকে যদি বাধা, হামলা ও প্রাণহানির মতো ঘটনার সূত্রপাত হয়, তখন দলটির পক্ষ থেকে দেশের গণতন্ত্রকামী সব পক্ষ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হবে। দলটির নেতারা মনে করেন, রাজপথে এমন প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হলে সরকার আরও চাপে পড়বে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ আরাফাত বলেন, চাপের কোনো বিষয় নেই। সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার লক্ষ্যেই এগোচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, তাঁদের টানা ১৫ বছরের শাসনে প্রশাসনসহ সব ক্ষেত্রে সরকারের সমর্থনে শক্ত ভিত্তি তৈরি হয়েছে। সেখানে সহজে চিড় ধরবে না বলে তাঁরা বিশ্বাস করেন। আর এমন ভিত্তিই আওয়ামী লীগ সরকারের বড় শক্তি।
কিন্তু অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও সরকার চাপে রয়েছে। দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে। ব্যাংকসহ আর্থিক খাত নিয়ে নানা অনিয়মের খবর সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের ব্যাপারে একধরনের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এই বাস্তবতা অস্বীকার করছেন না আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে। তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সরকারকে নাজুক অবস্থায় ফেলেছে। এরও সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে বিরোধী দল।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা যদিও মনে করছেন যে বিএনপির আন্দোলন এখনো সরকারের ওপর বড় কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি, কিন্তু তাঁরা এ-ও বলছেন, বিএনপি নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে নির্বাচন বানচাল করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করবে। আর নির্বাচন না হলে তখন সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। সেই পরিস্থিতিতে সরকার বেকায়দায় পড়বে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে এ ধরনের আলোচনা রয়েছে।