উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী কুবি শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছেন মেরী
বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২:১৪ অপরাহ্ণ
প্রায় দেড় মাসের বেশি সময় ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে জোর তৎপরতা চলছে। এ ব্যাপারে আগামীকালই সরকারের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে মনে করছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁর চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে তাঁর চিকিৎসা সম্ভব নয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে আন্দোলন করে যাচ্ছে দলটি। ইতোমধ্যে এ নিয়ে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামও শেষ হয়ে গেছে। চিকিৎসার জন্য স্থায়ী মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নতুন আবেদন করেছে তাঁর পরিবার। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, অল্প সময়ের মধ্যে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। খালেদার বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এর আগে বারবার নেতিবাচক সিদ্ধান্ত এলেও এবার বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পরিবার আশাবাদী। এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য চারটি দেশে খোঁজ নিচ্ছে পরিবার ও তাঁর দল। সব মিলিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে- কী হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার। তিন দিনের টানা ছুটি শেষে আগামীকাল খুলছে সরকারি দফতর। এ ব্যাপারে আগামীকালের প্রতি নজর তাঁর দল ও পরিবারের।
চিকিৎসাধীন বেগম জিয়াকে আবার কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকাল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সাত তলা থেকে চারতলায় সিসিইউতে নেওয়া হয়। গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে। তাঁর অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন উল্লেখ করে মেডিকেল বোর্ড সুপারিশ করেছে, দ্রুত তাঁর লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সেজন্য তাঁকে বিদেশে মাল্টিডিসিপ্লিনারি চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবারও আবেদন করা হয়েছে। সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার এ আবেদন করেন। এ বিষয়ে মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমে বলেছেন, এ বিষয়ে কয়েকদিন আগে আবেদন করা হয়েছে। যেটা পরে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাইবাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। আইন মন্ত্রণালয়সূত্র জানিয়েছেন, এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। তাই আগামীকাল রবিবার জানা যাচ্ছে খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার সম্মতির বিষয়ে।
এদিকে বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁকে বিদেশে নিতে চেয়ে করা আবেদনে ইতিবাচক সাড়া মিলবে- এমনটাই আশা পরিবারের সদস্যদের। খালেদা জিয়ার পরিবারের একটি সূত্র জানিয়েছেন, সরকার যদি অনুমতি দেয়, তাহলে দ্রুত যাতে খালেদা জিয়াকে বাইরে নেওয়া যায়, সেজন্যই এ প্রস্তুতি। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা চার দেশের হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছেন। মেডিকেল বোর্ড তাঁর লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তাঁর স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। এ কারণে তাঁকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। পরিবারের সদস্যরা আশাবাদী, খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি পাবেন। তাই তাঁরা জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে খোঁজখবর নিচ্ছেন, যাতে অনুমতি পাওয়ামাত্র খালেদা জিয়াকে বাইরে নিতে পারেন।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেবে, এমনটাই প্রত্যাশা করি। খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে বিদেশে পাঠানোর একটি আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রদানের প্রেক্ষাপটে বিএনপি মহাসচিব এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সর্বপ্রথম দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার তাঁকে বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেবে। উল্লেখ্য, দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর ছয় মাস পরপর তাঁর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।