সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে উজরা জেয়া


২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৪:৩৩ অপরাহ্ণ 

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে উজরা জেয়া
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

ঘুরেফিরে প্রসঙ্গ জাতীয় নির্বাচন। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে আবারো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা,গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে তাদের এই সাক্ষাৎ হয়। এ সময় বৈঠকে তারা বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমস্যা নিয়েও আলোচনা করেন। 

শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক নিয়ে উজরা জেয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম "এক্সে" একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি সাইড ইভেন্টের আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আবারো যুক্ত হতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, অংশীদারিত্বের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি এবং ৯ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে উদারতার সঙ্গে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করছি। 

গত জুলাইয়েও বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন উজরা জেয়া। তবে এ সফরে তিনি সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন। জোর দেন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উজরা জেয়ার সাক্ষাৎ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন। উজরা জেয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করা। এ সময় উজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তারা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য ১১৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেয়া রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করতে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপরও জোর দেন। এ সময় তিনি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করার আগে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা উচিত, অন্যথায় এই অঞ্চল নিরাপত্তার হুমকির মধ্যে পড়বে। কারণ রোহিঙ্গারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান এবং মাদক ব্যবসা।

এদিকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বৈশ্বিক সম্প্রদায় বিশেষ করে আসিয়ান সদস্য দেশগুলোকে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আরও বহুগুণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেন তিনি। এ সময় রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে চারটি প্রস্তাব তুলে ধরেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। বলেন, মিয়ানমার থেকে উদ্ভূত রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আরও বহুগুণ বাড়াতে হবে, সব বিকল্পের মধ্যে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনই সবচেয়ে কার্যকর। 


বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ‘তারা কি আমাদের ভুলে গেছে?’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক ইভেন্ট আয়োজন করে। ইভেন্টটি সঞ্চালনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। শেখ হাসিনা তার প্রথম ও দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলেন, আমি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন বিষয়টি সমাধান করে এবং এই দুর্দশাগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের জীবনধারণের জন্য আমাদের মানবিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এই বিষয়টিকে তাদের এজেন্ডার শীর্ষে রাখে। 

তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, এই জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন নিয়মে পরিণত করা এবং ঘৃণ্য নৃশংসতাকারী অপরাধীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য চলমান এবং প্রচলিত আইনি এবং বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ছয় বছর ধরে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের মর্মান্তিক বিতাড়নের ঘটনা দেখে আসা বিশ্বকে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের স্থায়ী দুর্ভোগের কথা আবারো স্মরণ করিয়ে দিতে আমরা আজ এখানে সমবেত হয়েছি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি নির্মম  হত্যাকাণ্ডের কারণে কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। 

আমরা আমাদের মাটিতে তাদের আশ্রয় এবং তাদের মৌলিক ও  মানবিক সেবা দিয়ে আসছি। আমি আমাদের সকল অংশীজন এবং বন্ধুদের তাদের সংহতির পাশাপাশি মানবিক সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। ইস্যুটি এখন স্থবিরতার পর্যায়ে পৌঁছেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ছয় বছরে একজন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারেনি। বাংলাদেশে তাদের দীর্ঘ উপস্থিতি কেবল তাদের হতাশার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন এটি কক্সবাজারের পরিস্থিতিকেও অনিশ্চিত করে তুলছে।

তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্ব অস্থিরতার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে এবং সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য অনেক কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা যে রেকর্ড পরিমাণ উচ্চতায় পৌঁছেছে সে বিষয়ে তারা অবগত আছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব রোহিঙ্গাদের ভুলে যেতে পারে না? কেননা ২০১৭ সালে তাদের দেশত্যাগ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না এবং তারা কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে নিপীড়ন ও বিতারণের শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিকারে এগিয়ে আসা সকলেরই দায়িত্ব। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা মিয়ানমারে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে এবং মর্যাদার সঙ্গে নিশ্চিত জীবনযাপন করতে পারবে। 

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছি তার দ্রুত বাস্তবায়নের দেশটির মনোযোগ দিতে হবে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে ছোট ব্যাচে যাচাইকৃত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য কাজ করছি। প্রক্রিয়াটি যেন স্বচ্ছ এবং স্বেচ্ছামূলক হয় তা নিশ্চিত করার জন্য, রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের মধ্যে একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, পাইলট প্রত্যাবাসন প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে আশা বাঁচিয়ে রাখবে। আমি আশা করি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনকারীদের রাখাইনে পুনরায় একত্রিত হতে সহায়তা করতে এগিয়ে আসবে।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ (ইউএইচসি) নিশ্চিত করতে পাঁচটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ (ইউএইচসি)’ বিষয়ক ইউএনজিএ উচ্চস্তরের বৈঠকে ভাষণদানকালে এ আহ্বান জানান।