মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৫

বুলেট ট্রেনের নকশায় মাছরাঙার ছাপ


৩০ বছর আগে জাপানের বিখ্যাত বুলেট ট্রেনেরও একটা ত্রুটি ছিল। সেই ত্রুতি ঠিক করা হয় মাছরাঙা পাখির অনুকরণে।

১৩ জুলাই ২০২৩, ৫:২৪ অপরাহ্ণ 

বুলেট ট্রেনের নকশায় মাছরাঙার ছাপ
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

বুলেট ট্রেনের কথা কে না জানে? দ্রুতগতির এই ট্রেন ছুটে চলে দুরন্ত গতিতে। আজ দেখে মনে হয় এই ট্রেন ত্রুটিহীন। কিন্তু ৩০ বছর আগে জাপানের বিখ্যাত এই বুলেট ট্রেনেরও একটা ত্রুটি ছিল। সেখানে সব ট্রেনকেই কয়েকটি সুড়ঙ্গ অতিক্রম করতে হতো। টানেলের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বিকট শব্দ করতো এটি। যা বন্যপ্রাণি, যাত্রী এবং আশপাশে থাকা মানুষের জন্য বিরক্তিকর ছিল।

কিন্তু কেন হচ্ছে এই শব্দ? এ নিয়ে নড়েচড়ে বসল গবেষকরা। গবেষণায় তারা দেখালেন, টানেলে ঢোকার সময় ট্রেনের বাতাসের সামনে একটি অদৃশ্য স্তর থাকত। ট্রেনটি চলে যাওয়ার সময় সঙ্কুচিত বায়ু শব্দ তৈরি করত এবং সেটিই টানেল থেকে বের হওয়ার সময় বোম-বন্দুকের গুলির মতো করে শব্দ করত। বাতাসের কারণে ট্রেনের গতিও কমে আসত, অনেকটা পানির মধ্য দিয়ে হাঁটার মতো হতো সেই শব্দ।

কীভাবে এ সমস্যার সমাধান করা যায় এ নিয়ে  গবেষকরা আবার গবেষণা শুরু করে দিলেন।  এই গবেষণায় সমাধান এনে দিল একটি পাখি, মাছরাঙা পাখি। গবেষণায় করে দেখা গেল মাছরাঙার ঠোঁট অতি সরু এবং তীক্ষ্ণ। পানিতে প্রবেশ করার জন্য এই পাখি আদর্শ পাখি। 

মাছরাঙা পাখির লম্বা ও সরু ঠোঁট গোড়া থেকে ব্যাসে বড় হয়ে পাখির মাথা পর্যন্ত এসেছে। পাখিটি যখন তার তীক্ষ্ণ ঠোঁট নিয়ে পানিতে প্রবেশ করে, তখন সংঘর্ষ কম হয়। ঠোঁটের পাশ দিয়ে পানি চলে  যাওয়ায় সহজেই পানিতে প্রবেশ করতে পারে তারা। ঠোঁটের সামনের অংশ দিয়ে পানির স্তরকে তাদের ধাক্কা দিতে হয় না। 

মাছরাঙা শিকার ধরতে নিম্নচাপ অঞ্চল থেকে উচ্চচাপ অঞ্চলে ঘণ্টায় প্রায় পঁচিশ মাইল বেগে ঝাঁপ দিতে পারে। সুচালো এই ঠোঁটের জন্যই জলে কোনো তরঙ্গেরও সৃষ্টি হয় না। পাখির ঠোঁট দুটি ত্রিভুজ আকৃতিতে গঠিত। যাতে কিছুটা বৃত্তকার প্রান্তও আছে, সেটি একটা চ্যাপ্টা হীরার আকার নেয়। এইসব অনুধাবনের মাধ্যমেই মাছরাঙার ঠোঁট গবেষকদের ট্রেনের মাথার নকশা তৈরিতে সাহায্য করেছিল। 

তারপরই বদলে দেওয়া হয় বুলেট ট্রেনের সামনের নকশা। মাছরাঙার ঠোঁটের আদলেই পালটে ফেলা হয় বুলেট ট্রেনকে।  ফলাফলও ভাল আসে, দেখা যায় নতুন ট্রেনটিতে আগের মতো কোনো শব্দ হয়না। তাছাড়া আগের চেয়েও দ্রুত গতিতে চলতে সক্ষমতা অর্জন করে ট্রেনটি। এরফলে বিদ্যুৎ খরচও কমে যায় আগের খরচের চেয়ে।