রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫
বিএনপি

পৃথক সমাবেশে ঢাকার দুই মেরুতে দুই জন


২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৩:১৭ অপরাহ্ণ 

পৃথক সমাবেশে ঢাকার দুই মেরুতে দুই জন
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

এক দফা দাবিতে গতকাল বিকালে রাজধানী ঢাকার দুই প্রবেশমুখে সমাবেশ করেছে বিএনপি। উত্তরার আবদুল্লাহপুর পলওয়েল মার্কেট সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাস্তায় যেহেতু নেমেছি, সেহেতু বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। অন্যদিকে যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সমাবেশে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, এই সংবিধানের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা রাস্তায় নেমেছি, আমরা পদযাত্রা করছি, রোডমার্চ করছি; জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে আছি। কথা পরিষ্কার- দেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই, শেখ হাসিনা থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। দেশের জনগণ তাকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। গতকাল রাজধানীর আবদুল্লাহপুর পলওয়েল সুপার মার্কেট সংলগ্ন মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার এটা জীবন-মরণ বিষয়। কিন্তু সরকার তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দেশে যদি কেউ সর্বাধিক নির্যাতিত, বঞ্চিত থাকেন তিনি বেগম খালেদা জিয়া। তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আটকে রেখেছে সরকার তা কিন্তু আমরা জানি। তিনি একজন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। তার ডাকে কোটি কোটি মানুষ বেরিয়ে আসত, তা বুঝতে পেরে এই সরকার তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকার কাউকে ভোট দিতে দেয় না। সবকিছু জোর করে কেড়ে নেয়। বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশ যখন সুষ্ঠু নির্বাচন চাচ্ছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে, তখন সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বর্তমান সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কীসের সংবিধান, যেটা তোমরা কাটাছেঁড়া করে শেষ করে দিয়েছ। সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি টিম এসেছিল, দেশে নির্বাচনের ব্যবস্থা কেমন দেখতে। তারা বসেছিল দেশের রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, পত্রিকার সম্পাদক ও জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে। তারা বলেছিল দেশে গিয়ে বলব, এ দেশে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক টিম পাঠাব কি না। তারা কী বলেছে? তারা বলেছে- বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তাই তারা পর্যবেক্ষক টিম পাঠাবে না।

আর নির্বাচন কমিশনের নির্লজ্জ সচিব বলেন, বাজেট ঘাটতির কারণে নাকি তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে সদস্যসচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল প্রমুখ।

জুমার নামাজের পর পরই সমাবেশে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান চেয়ারম্যান, হাজী মোস্তফা জামানসহ নেতারা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন।

 সরকারকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আবাস। বলেছেন, এই সংবিধানের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। গতকাল বিকালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার আবারও ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে সংঘটিত সব গুম-খুন হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে। যারা এসবের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা আর কোনো জুলুম সহ্য করব না। আমরা জুলুমবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। সরকারের বিরুদ্ধে সারা বাংলাদেশ ফুঁসে উঠেছে। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা প্রস্তুতি নিন, সময় আসছে, আন্দোলনের জোয়ারে সরকারকে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকতে পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছে। সরকার মানুষের ওপর নির্যাতন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কোনো ডিসি-এসপি অন্যায় করলে দেশের আইনে বিচার করা হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের আহ্বায়ক মো. সুমন ভূইয়া ও সদস্য সচিব বদরুল আলম সবুজ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন সরদার, আকবর হোসেন নান্টু ভূঁইয়া, জামশেদুল আলম শ্যামল, শ্যামপুর থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলীম আল বারী জুয়েল, ডেমরা থানা বিএনপির সাবেক ছাত্রনেতা মনির হোসেন খানসহ নেতারা মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসেন। এ ছাড়া দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ও নিজ সংগঠনের ব্যানার হাতে রাজধানীর দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিক দল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল ও জাসাসসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে সমবেত হন। বিএনপির সকল অঙ্গ সংঘটনের নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূট অংশগ্রহন ছিল চোখে পড়ার মত।