বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫

খুবিতে বাণী অর্চনা


খুবিতে বাণী অর্চনা

১৪ই ফেব্রুয়ারি (বুধবার) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মন্দির প্রাঙ্গণে বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী সরস্বতীর পূজা উদযাপিত | ছবি: আজকের প্রসঙ্গ

  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

ব্যাপক আড়ম্বড়তার সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালন করা হয়েছে দেবী ভারতীর আরাধনা। আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি (বুধবার) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মন্দির প্রাঙ্গণে বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়।এসময় পুরো মন্দির প্রাঙ্গণ ভক্ত, পূর্ণার্থী ও শিক্ষার্থীদের সমাগমে জমজমাট হয়ে উঠেছিল।

সরস্বতী হচ্ছে বৈদিক সংস্কৃত শব্দ যার মূল উৎস হচ্ছে সনাতন ধর্মের প্রধান এবং সবচেয়ে প্রাচীন শাস্ত্র বেদ। পবিত্র বেদ এর বিভিন্ন মন্ত্রে সরস্বতী শব্দের প্রয়োগ রয়েছে এবং অসংখ্য গুনবাচক নামের মধ্যে একটি হচ্ছে সরস্বতী।প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়।

এজন্য এই পূজাকে বসন্ত পঞ্চমী নামেও ডাকা হয়‌। এবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২:৪১ মিনিটে থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২:০৯ মিনিট পর্যন্ত ছিল বসন্ত পঞ্চমী তিথি।খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারের বাণী অর্চনায় সকাল ৮টায় মন্দিরে প্রতিমা স্থাপন, সকাল ৯টায় দেবীর আমন্ত্রণ, সকাল ১০টায় পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন, সকাল ১১.৩০ মিনিটে প্রসাদ বিতরণ এবং বিকেল ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

মন্দির প্রাঙ্গণে পূজা উপলক্ষে বেলা ১১টার দিকে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে উপাচার্য এবারের সরস্বতী পূজার স্মরণিকা স্মরক "পঞ্চমী" গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। উপাচার্য এসময় বলেন,"খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অসাম্প্রদায়িকতার অনন্য উদাহরণ।এই সম্প্রীতি ধরে রেখে সামনের দিকে এগোতে হবে এবং এই দৃষ্টান্ত দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ুক- এ প্রত্যাশা করি।"

এবারের বসন্ত উৎসব ( ১লা ফাল্গুন), ভালোবাসা দিবস এবং সরস্বতী পূজা একসাথে হওয়ায় অন্য বারের থেকে পূজায় লোক সমাগম বেশি ছিল । পূজা প্রাঙ্গণে যেয়ে দেখা যায়, পূজা উপলক্ষে সকাল ৯টা থেকে খুলনার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত পূর্ণার্থী আসতে শুরু করেছেন মন্দিরে।বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মন্দির চত্বরে মানুষের ঢল নামে। নানান সাজে নিজেদের সাজিয়ে দেবী বন্দনায় এসেছেন সবাই। কেউ কেউ পরেছেন বাসন্তী রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবি। কেউ সেজেছেন ভালোবাসার লাল রঙে। আবার কেউ কেউ পরেছেন লাল পাড়ের সাদা শাড়ি। অনেকে আবার স্মৃতিগুলো ধরে রাখতে ব্যস্ত ক্যামেরায়, আবার কেউ কেউ মেতেছেন খোশগল্পে।নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বয়সভেদে সবাই মেতেছেন এই বসন্ত পঞ্চমী উৎসবে। দেবীর পুষ্পাঞ্জলি শেষ হওয়ার পর সবাইকে দেওয়া হয় খিচুড়ি প্রসাদ।সব মিলিয়ে এ যেন এক মিলন মেলা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্রী তমা রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,"প্রতিবারের মতো এবারও সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ক্যাম্পাসে এসেছি। সবাই মিলে অনেক মজা করছি। প্রত্যেক বারের মত পূজার সামগ্রিক আয়োজন সুষ্ঠু হয়েছে। সবাইকে জ্ঞান দানের মাধ্যমে মা সরস্বতী যেন আমাদের মননে ও মানসিকতায় জ্ঞানের আলো প্রজ্জ্বলন করেন এবং মনের কালিমা দূর করেন এই প্রার্থনা করি।"

ভাস্কর্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী সৌরভ রায় বলেন," বরাবরের মতো এবারও পূজায় অনেক আনন্দ করছি। যেহেতু এটা আমার ক্যাম্পাস লাইফে প্রথম সরস্বতী পূজা সেজন্য অনেক ভালো লাগছে। আবার বাড়ি থেকে দূরে থাকায় মনে খারাপ লাগা কাজ করছে।সে যাই হোক, সরস্বতী পূজার দিন বলতে চাই সবার ভিতরের হিংসা-বিদ্বেষ লোপ পাক এবং সকলে সুখে শান্তিতে বসবাস করুক এটাই কামনা করি।"

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র গণেশ চক্রবর্তী বলেন,"বৈদিক শাস্ত্রমতে আমরা বাগদেবীর আরাধনা করি।সনাতনীরা বিশ্বাস করেন বিদ্যার দেবী সরস্বতী। জ্ঞান এবং বিদ্যার প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রত্যেক সনাতনী বিদ্যার্থী ছোটবেলা থেকেই বাগদেবীর আরাধনা করে থাকেন। আমরা বিশ্বাস করি জাতি, বর্ণ, বয়স নির্বিশেষে সকলের বিদ্যা লাভের অধিকার রয়েছে।এটা শুধু যে জ্ঞানের আরাধনার তা নয়, সাথে এই পূজা বিশ্বশান্তি ও সম্প্রীতির বার্তাও বহন করে। আজ বসন্তের প্রথম দিন আবার সাথে বসন্ত পঞ্চমী তিথি কাজেই সব মিলিয়ে অনেক ভালো সময় কাটাচ্ছি।

এখানে উল্লেখ্য যে,প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় এবং তাদের তত্ত্বাবধানে এবারের পূজা সফলভাবে উদযাপিত হয়েছে।