রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫

নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ কর্তৃক অবরুদ্ধ প্রশাসনিক ভবন


নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ কর্তৃক অবরুদ্ধ প্রশাসনিক ভবন
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বহিরাগত এক দম্পতিকে  ডেকে নিয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৫ দফা দাবিতে ২ ঘণ্টার জন্য প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছেন নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ।

১২ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সকাল নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান নেন সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরপর বেলা ১১টার দিকে অবরোধ কর্মসূচি শেষ করেন তারা। অবরোধের ফলে প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

অবরোধ চলাকালে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের কোনো বাস্তবায়ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করতে পারেনি। তারা পাঁচ কর্মদিবস সময় চেয়েছেন। কিন্তু নির্ধারিত সময় গতকাল (রোববার) শেষ হলেও অছাত্রদেরকে বের তো দূরে থাক বরং প্রশাসন তাদেরকে নিয়ে ভাগবাটোয়ারার মিটিং করছে প্রতিনিয়ত। তাই পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা অবরোধ করছি।

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীম সুলতানা বলেন, জাহাঙ্গীরনগর এখন একটি মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। আপনি কথা দিয়েও কোনো প্রতিকার করতে পারেননি। প্রশাসনকে বারবার বলেছিলাম আমরা আপনাদেরকে সাহায্য করবো। কিন্তু আপনারা আমাদের সাহায্যে চান না। কেন চান না তা জাতি জানে। এই আন্দোলন কোনো দলের আন্দোলন না, এই আন্দোলন একটা পবিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আন্দোলন। ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক দিকটা আজ কোথাও নেই। শুধু শিক্ষার্থীরা ব্যাবহৃত হচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের একটাই মেসেজ দিতে চাই, ওরা তোমাদের লাটিয়াল বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে, ওরাই তোমাদের ধর্ষক বানাচ্ছে। কোনো মা-বাবা চায় না তার ছেলে ধর্ষক হোক।

নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের সংগঠক ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলি বলেন, উপাচার্য গতকাল (রোববার) বলেছেন আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি অছাত্রদের বের করার। তিনি যদি আপ্রাণ চেষ্টা করেই থাকবে তাহলে এই পাঁচ দিনে অন্তত পাঁচশত শিক্ষার্থী বের করার কথা। যদি সেটা না পারেন তাহলে তিনি কোন নৈতিকতার বলে তিনি তার পদে আছেন সেই প্রশ্নটি করতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গত কয়েকবছর ধরে ঘুরে ঘুরে পদে আসছেন। আমরা জানি না তার মধ্যে বিশেষ কি গুণ রয়েছে, কোনো বিশেষ গুণতো দেখতে পাই না। তিনি নিজেও নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত, অসংখ্য নিপীড়নের ঘটনাকে তিনি উস্কে দিচ্ছেন। তাকে বারবার ক্ষমতায় বসিয়ে কি বুঝাতে চান আমরা বুঝিনা।

শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো, অছাত্রদের বের করে গণরুম বিলুপ্ত করা, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা, যৌন নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তিসহ ক্যাম্পাসে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা, ধর্ষণের ঘটনায় প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত করা এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত চলাকালে তাদের প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া ও মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এছাড়াও শিক্ষার্থীরা দাবি করেন যে অছাত্র বের করার বদলে বৈধ শিক্ষার্থীদের প্রেশার দেয়া হচ্ছে। ৪ জনের রুমে ৬ জন ৮ জনকে রাখা হচ্ছে। গণরুম বিলুপ্তের কথা বলে তারা মিনি গণরুম তৈরি করছে। যা প্রশাসনের ব্যর্থতার নামান্তর।

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহি সাত্তার, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।