জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ গুণী শিক্ষক নির্বাচিত হলেন সুলতানা রাজিয়া
রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৭:২২ অপরাহ্ণ
ভোলায় পল্লী বিদ্যুতের গাফিলতিতে শতাধিক একর জমির বোরো আবাদ বন্ধ, দুচিন্তায় দেড় শতাধিক কৃষক | ছবি: আজকের প্রসঙ্গ
গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন |
বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বোরো ক্ষেতে পানি দিতে পারছে না ইলিশার দেড় শতাধিক কৃষক। যার ফলে ১শ’একরের বেশি জমির বোরো আবাদ বন্ধ রয়েছে। বোরো আবাদ করতে না পেরে চরম হতাশা ও দুচিন্তায় কৃষকরা। সড়ক ও জনপদ বিভাগ ব্রীজ নির্মাণ করতে গিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ করে। সেই থেকে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন। ব্রীজ নির্মিত হওয়ার পর সেই খুটি পুনরায় বসানো হলেও কৃষকদের সেচের স্কিমে সংযোগ না দেওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারী) ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের গুপ্তমুন্সী গ্রামের গাজুনিয়ার বিল এলাকায় গেলে কৃষকরা অভিযোগ করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পরানগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম এর গাফলতির কারণে বোরো উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি কানে নিচ্ছে না। এমনকি গত শুক্রবার বিকেলে বিদ্যুতের দাবীতে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগী কৃষকরা। এরপরও কোন ব্যাবস্থা না নেয়ায় কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আঃ রহমান সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার ও সাবেক মেম্বার আঃ রহমান হাওলাদার জানান, গত বছর ভোলা-বরিশাল মহাসড়কের গুপ্তমুন্সীর কোব্বাত আলী হাওলাদার বাড়ীর দরজার ব্রীজটি সংস্কার এর উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এসময় তারা ব্রীজ সংস্কারের কাজের স্বার্থে পাশে থাকা বিদ্যুৎ এর খুঁটি সরিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ব্রীজ নির্মাণ কাজ শেষ হলেও অদ্যাবদি ঐ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি। এতে ওই এলাকার ইরি ধান রোপনে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে বোরো (ইরি) চাষাবাদের মৌসুম শেষের দিকে। অথচ বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় কৃষকদের সেচ প্রকল্পে পানি দেয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষকরা সম্মিলিতভাবে সড়ক ও জনপদ বিভাগে গেলে তারা পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। অন্যদিকে গত ৩ মাস ধরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পরানগঞ্জ জোনাল অফিসে ডিজিএম আশিকুর রহমানের কাছে ধর্ণা ধরে আসলেও পল্লীবিদ্যুৎ বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। ডিজিএম আশিকুর রহমানের গাফলতির কারণে বন্ধ হয়ে আছে সেচ কার্যক্রম এবং বোরো চাষাবাদ। যার কারণে কৃষকরা বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বলেও জানান তিনি।
ওই এলাকার কৃষক মোঃ মানিক মোল্লা জানান, অন্যান্য গ্রামে বোরো চাষাবাদ শুরু হয়ে গেছে। অথচ গুপ্তমুন্সী গ্রামের গাজুনিয়ার বিল এলাকায় এখনো শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও পানির অভাবে বোরোর বীজতলা শুকিয়ে গেছে। ধানের চারা মরে যাচ্ছে। এতে কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তিনি আরও জানান, এ বছর তিনি ৩ একর জমি বোরো চাষের জন্য প্রস্তুত করেছেন। এতে তার লক্ষাধিক টাকা ব্যায় হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে শুরু করতে পারছে না।
শুধু মানিক মোল্লা নন এরকম দেড় শতাধিক কৃষকের অভিযোগ সময় মতো যদি তারা সেচের ব্যবস্থা করতে না পারেন তাহলে তাদের কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হবে এবং দেশও কয়েক হাজার মেট্রিক টন বোরো উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হবে।
কৃষক হারুন, মোসলেউদ্দিন মিজি বলেন, বোরোর চাষাবাদ করার জন্য তারা ধারদেনা করে, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে যখন মাঠ প্রস্তুত করলেন ঠিক তখন বিদ্যুতের অভাবে সবকিছুই ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। যদি চাষাবাদ করতে না পারেন তাহলে একদিকে যেমন তারা খরচের টাকা তুলতে পারবেন না। অন্যদিকে ধান না পেলে ভবিষ্যতেও না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হবে। কৃষকদের চোখে মুখে এখন শুধুই হতাশা। কবে বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে আর সেচ দিয়ে বোরোর চাষাবাদ করতে পারবেন, যদি না পারেন তাহলে সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটাবেন তা নিয়েও দুশ্চিন্তার শেষ নেই কৃষকদের।
কৃষক সিরাজ উদ্দিন মিজি, মজির উদ্দিন মল্লিক, নাসির উদ্দিন মোল্লা বলেন, সরকারের প্রধানমন্ত্রী যেখানে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার নির্দেশ দিয়েছে, সেখানে এই বিলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পরানগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম আশিকুর রহমানের খামখেয়ালীর কারণে শতাধিক একর জমি যদি চাষাবাদ থেকে বাদ যায় তাহলে তার দায় দায়িত্ব পল্লীবিদ্যুতকেই বহন করতে হবে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পল্লীবিদ্যু সমিতি পরানগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম আশিকুর রহমান জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার জন্য সেচ প্রকল্পের বিদ্যুৎ গ্ৰাহক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অফিসে কোন আবেদন করেননি। আবেদন পেলে সংযোগ দেয়া হবে বলে তিনি জানান।