রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪

জাবির বিভিন্ন হলে অবাধ যাতায়াত ছিল মামুনের


জাবির বিভিন্ন হলে অবাধ যাতায়াত ছিল মামুনের
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) তে ৩রা ফেব্রুয়ারি বহিরাগত দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মামুনুর রশিদ মামুন (৪৪) কে গতকাল গ্রেফতার করার পর র‍্যাব প্রাথমিক জিজ্ঞেসাবাদ করেছে।

জিজ্ঞেসাবাদে মামুন স্বীকারোক্তি দিয়েছে বহিরাগত হয়েও ক্যাম্পাসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার। বিভিন্ন সময় মামুন মাদক কারবারের জন্য প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয় হলে অবস্থান করত। এমনকি সিনিয়র ছাত্রদের সাথে মাদক সেবন করত সে। মামুনের ইয়াবা বিক্রির হটজোন ছিল জাবি ক্যাম্পাস, বিশেষ করে ক্যাম্পাসের বটতলায়, মীর মশাররফ হোসেন হল এবং বঙ্গবন্ধু হল।

এসময় তিনি জানান যে মামুন প্রতিমাসে তিন থেকে চার বার কক্সবাজার যেত এবং সে প্রতি চালানে গড়ে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার পিছ ইয়াবা নিয়ে আসত। প্রতিমাসে সে সাত থেকে আট হাজার পিছ ইয়াবা বিক্রি করত। তার বেশিরভাগ ক্রেতাই ছিল ক্যাম্পাসের পড়াশোনা শেষ করে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে এমন শিক্ষার্থীরা।

এসময় কমান্ডার খন্দকার আল মঈন নিশ্চিত করে যে, গ্রেফতার মামুন প্রায় ৬/৭ বছর ধরে মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত। তার নামে আরও ৬ টি মাদক মামলা চলমান।

এছাড়াও মামুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাদক বিক্রির সুবাদে মামলার ১ নম্বর আসামি মোস্তাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র ছাত্রদের সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয়। মামুন প্রায়ই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে মাদকসহ রাত্রিযাপন করতেন এবং অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে মাদক সেবন করতেন।

মামুন প্রাথমিক জিজ্ঞেসাবাদে র‍্যাবকে জানায় এসব সিনিয়র শিক্ষার্থীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে একাধিক নারীকে ক্যাম্পাসে নিয়ে এসে ধর্ষণকান্ড ঘটানো হয়েছে। প্রতিবার ভয় ভীতি প্রদর্শন করে এসব ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগও পেয়েছে র‍্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন বলেন, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে ঘটনার দিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৪ জনকে আটক করে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভেতরে গণধর্ষণের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে তৎপরতা বাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর৷ বুধবার রাতে রাজধানীর ফার্মগেট থেকে ধর্ষণের ঘটনার মূল হোতা মামুনুর রশিদ মামুন এবং অন্য একটি আভিযানিক দল নওগাঁ সদর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অন্যতম আসামি মো. মুরাদকে (২২) গ্রেফতার করে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০ টায় জাবির মীর মোশারফ হোসেন হলের সিসি টিভির ফুটেজে দেখা যায়, ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী৷ কিছুটা উদ্বিগ্ন দেখা যাচ্ছে ভুক্তভোগী নারীকে৷ ঠিক ১৫ মিনিট পরেই হলের বাইরের আরেকটি সিসি টিভির ফুটেজে দেখা যায় ভুক্তভোগীর স্বামীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি করছে অভিযুক্তরা৷

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দীর্ঘদিন ধরে একই ফ্ল্যাটে ভুক্তভোগীর সঙ্গে বসবাস করতো মূল হোতা মামুন৷ এরই মাধ্যমে ভুক্তভোগী নারীর স্বামী জাহিদের সঙ্গে মাদক বিক্রির সখ্যতা দক্ষতা গড়ে ওঠে মামুনের৷

অপর গ্রেফতারকৃত আসামী সম্পর্কে র‍্যাব জানায়,গ্রেফতারকৃত মুরাদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ৪৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী এবং  মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তার বিরুদ্ধে নওগাঁ থানায় মারামারি সংক্রান্তে ১টি জিডি রয়েছে বলে জানা যায়।

এই গণধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। এ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানবন্ধব, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‍্যাব।