রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪

এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বাঁশের সাঁকো


৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:২৫ অপরাহ্ণ 

এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বাঁশের সাঁকো
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের ফেদুল্লা বেপারী কান্দি নদীর উপর নির্মিত প্রায় ৩০০ মিটার বাঁশের সাঁকোতে ঝুঁকি নিয়ে প্রায় ৫৩ বছর ধরে চলাচল করছেন ঐ এলাকার মানুষ। এই সাঁকো ব্যবহার করে পূর্বনাওডোবা, পালেরচর ও বড়কান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রায় ২০-৩০ হাজার মানুষ চলাচল করেন। এরমধ্যে রয়েছে ঐ এলাকার ৫-৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।

জানা যায়, বছর দশেক আগে বর্ষার মৌসুমে নৌকাডুবিতে একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। তাই প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে একজন দায়িত্বশীল নিযুক্ত করে দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয় স্থানীয়দের উদ্যোগে। এবারও মন্টু মিয়া নামে তেমনি একজন দায়িত্বশীল নিয়োগ দিয়েছে এলাকাবাসী। ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে চলাচলের সময় মাঝেমধ্যেই ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে ওই স্থানে একটি পাকা সেতুর দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিলেও কোন সুরাহা হয়নি। তবে সেতু নির্মাণের জন্য নকশা প্রস্তুত করে অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে দাবী করছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী।

সাঁকো তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা মন্টু মিয়া আজকের প্রসঙ্গকে বলেন, 'সাঁকোটি নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছি এই এলাকার মানুষের কষ্ট কমাতে। এটি নির্মাণ করতে স্থানীয় কয়েকজন টাকা এবং কৃষি পণ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন। আর প্রতিদিন এখানে বসলে চলাচলকারীরা ৫-১০ টাকা যা দেয় তা দিয়ে পুষিয়ে নেই।'

প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ শাখা নদীর এক মাথা পদ্মা নদীর সঙ্গে যুক্ত হলেও আরেক মাথা পূর্ব নাওডোবা এলাকায় গিয়ে প্রায় ভরাট হয়ে কৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে। নদীটি প্রায় আধা কিলোমিটার প্রসার হলেও দিনে দিনে ভরাট হয়ে যাওয়ায় অনেকের কাছে এটি নিচু জলা ভূমি, অনেকে একে বাওর বলে থাকেন। বর্ষায় এই নদীতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে এলে এর বুকে বিভিন্ন স্থানে জেগে থাকা জমিতে চাষাবাদ করেন স্থানীয় কৃষকরা। তবে এটি নদী না জলাভূমি, তা নিয়ে পাউবো ও জেলা প্রশাসনের সাথে দ্বিমত রয়েছে।

উপজেলার পালেরচর, বড়কান্দি ও পূর্বনাওডোবা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মধ্যবর্তী এই শাখা নদীর সাথেই রয়েছে আমজাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব নাওডোবা পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় সহ আরো অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকো দিয়েই পারাপার হতে হয়। অনেক সময় সাঁকো থেকে পড়ে আহত হয় তারা, ভিজে যায় বই-খাতাসহ পোশাক। সাঁতার না জানায় অনেক শিশু শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে ভয় পায়। এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে নৌকা কিংবা ট্রলারে পারাপার হতে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহ আলম মাদবর বলেন, 'সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিশু সহ বয়স্ক ও নারীদের পারাপারের সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। জরুরি প্রয়োজনে অসুস্থ রোগী ও গর্ভবতী মায়েদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অন্যদিক দিয়ে দীর্ঘ পথ ঘুরে প্রধান সড়কে উঠতে হয়।

স্থানীয় কৃষি কাজে নিয়োজিত সোহেল বেপারী আজকের প্রসঙ্গকে বলেন, 'এই নদীটি রুপবাবুর হাট ও ফেদুল্লা বেপারী কান্দি গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় দুই পাশের ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম এলাকার কৃষিপণ্য এখান দিয়ে বাজারে বিক্রির জন্য নিতে হয়। এতে পরিবহণে অনেক খরচ হয়ে যায়। একটি সেতু থাকলে তিন ভাগের দুইভাগ খরচ কমে যেতো।'

ফেদুল্লা বেপারী কান্দির বাসিন্দা তাইজুল ইসলাম আজকের প্রসঙ্গকে বলেন, 'আমার বয়স চল্লিশের বেশি, আমার জন্ম থেকেই এই দুর্ভোগ নিয়ে এখান দিয়ে চলাচল করে আসছি। আমার বাবারাও এভাবেই চলে আসছেন। আমাদের স্বাধীনতার ৫৩ বছর হয়েছে। এই ৫৩ বছর ধরেই আমাদের এই দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। নির্বাচনের সময় এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বার বার এখান দিয়ে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোটে পাস করার পর তাদের প্রতিশ্রুতির কথা আর মনে থাকে না। কত জনপ্রতিনিধি আসলো কিন্তু কেউ কথা রাখেনি।'

তিনি আরও বলেন, 'পদ্মা সেতু হওয়ায় আমাদের জাজিরা উপজেলায় উন্নয়নের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চললেও আমাদের এই দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই।'

পূর্ব নাওডোবা পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিমু আক্তার বলেন, 'বাঁশের সাঁকোটির মাঝে ফাঁকা ফাঁকা থাকায় মাঝেমধ্যেই পা পিছলে সাঁকোর নিচে পরে যাই। স্কুলের পোষাক ও বইখাতা ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। এখান দিয়ে চলাচল করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। আমরা এখানে একটি পাকা সেতু চাই।'

পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন খান আজকের প্রসঙ্গকে বলেন, 'নদীতে একটি সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ এ অঞ্চলের মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতুটি নির্মাণ হলে পালেরচর, পূর্ব নাওডোবা, বড়কান্দি, কুন্ডেরচর, মাঝিরচর, বি কে নগর এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব সহজ হয়ে যাবে। সেতুটি নির্মাণ বাস্তবায়নে আমি প্রতিনিয়ত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ ও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।'

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইমন মোল্লা আজকের প্রসঙ্গকে বলেন, 'আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নে অবস্থিত নদীর উপর সেতু নির্মানের জন্য নকশা প্রস্তুত করে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। কিন্তু এটি নদী না জলাভূমি তা নিয়ে পাউবো এবং জেলা প্রশাসনের সাথে দ্বিমত থাকায় তা আটকে আছে। এরপর আমরা আবারও নতুন করে সেতুর জন্য নকশা প্রস্তুত করে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করি প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য হলে সেতুটি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো।