রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪

চবিতে ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ


চবিতে ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার ও দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিভাগের দুই ছাত্রী ও প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা।

গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন রসায়ন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের এক ছাত্রী। অভিযোগপত্রে তিনি লেখেন, ‘গেল ৬ জানুয়ারি আনুমানিক সকাল ১০টা নাগাদ আমি ল্যাবে একা কাজ করা অবস্থায় তিনি প্রবেশ করেন এবং তার ঠান্ডা লাগছে এই কথা বলে তিনি আমাকে জোর করে জড়িয়ে ধরেন। এমতাবস্থায় আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিই এবং আমার ল্যাবমেট এসে উপস্থিত হওয়ায় আমি কোনোরকম বেঁচে যাই। তখন আমি ও আমার ল্যাবের মেয়েরা একা ল্যাবে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’

গত ১৩ জানুয়ারি আনুমানিক দুপুর ১২টা নাগাদ ওই শিক্ষক কেমিকেল দেওয়ার বাহানা করে রুমে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ তোলেন ওই ছাত্রী। তিনি বলেন, আমাকে ফ্রিজ থেকে কেমিকেল বের করারত অবস্থায় পিছন থেকে জোরপূর্বক জড়িয়ে ধরেন। এবং তার হাত ও ঠোঁট দিয়ে আমার স্পর্শকাতর অংশে স্পর্শ করেন। আমি তাকে ধাক্কা মেরে রুম থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তিনি দরজা বন্ধ করে আমাকে ধর্ষণ চেষ্টা করেন। আমি ধস্তাধস্তি করে উনার রুম থেকে আত্মরক্ষা করে পালিয়ে বাঁচতে সক্ষম হই। তৎক্ষণাৎ বিষয়টি আমি ল্যাবের বাকি দুজন মেয়েকে অবগত করি। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বেও এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের শিকার হয়েছে তারা।

গত বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিভাগের সভাপতিকে দেওয়া এক অভিযোগ পত্রে আরেক ছাত্রী উল্লেখ করেন, ‘মাস্টার্সের লিখিত পরীক্ষার সময় অসদুপায় অবলম্বন করার কারণে একজন স্যার কর্তৃক আমাকে বরখাস্ত করা হয়। উক্ত কারণ প্রদর্শনপূর্বক পরীক্ষা কমিটির সভাপতি আমাকে তার রুমে একা ডেকে পাঠান। তার রুমে প্রবেশের পর স্যার রুমে বসার নির্দেশ দেন এবং আমি চেয়ারে বসার পর হঠাৎ করে পেছন দিকে স্যার আমার কাছে চলে আসেন এবং আমি ওনার নিশ্বাসের শব্দ শুনে চমকে উঠি।’

আমি চেয়ার থেকে ভয়ে উঠে চিৎকার করে কান্নাকাটি করে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখি রুমের দরজা লক করা। তারপর তিনি আমাকে অনুরোধ করেন এভাবে কান্নাকাটিরত অবস্থায় বাইরে না যেতে। তারপর তিনি আমাকে কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখেন কান্না থামানোর জন্য। পরে আমি কোনোভাবে স্বাভাবিক হয়ে রুম থেকে বের হই।

আভিযোগ পত্রে আরও লিখেন,‘পরদিন তিনি আমাকে ও ল্যাবমেট বাকি দুজনকে রুমে ডেকে নিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি দেন, বিষয়টি কাউকে প্রকাশ না করার জন্য এবং তার সঙ্গে মধ্যস্থতা করার জন্য আমাদের তিনজনকে ২৫ মিনিটের বেশি সময় জোর করে তার রুমে আটকে রাখেন। আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই জঘন্যতম ঘটনার কারণে আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ডভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। এমতাবস্থায় আমি আমার থিসিস ল্যাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং এই ল্যাবে পরবর্তী থিসিস কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

একই বিভাগের ১ম বর্ষ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সব বর্ষের শিক্ষার্থীদের পক্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষরে বিভাগের আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, রাতে মোবাইলে কল করে বিরক্ত করা, ফেসবুকের পোস্টে বাজে কমেন্ট করা এবং বিভাগে কাউকে একা পেলে অশালীন কথাবার্তা বলা।

বিভাগের সভাপতি বলেন, তিনজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাইয়ে আমরা ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করেছি। আমরা শিক্ষার্থীদের অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এই বিষয়ের যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।

গত এক ফেব্রুয়ারি ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্ত শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি যৌন নিপীড়ন সেলে পাঠানো হয়।