
তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৫:১৮ অপরাহ্ণ
শরীয়তপুরের ডামুড্যায় নির্দিষ্ট একটি কোম্পানির ঔষধের নাম ব্যবস্থাপত্রে না লেখায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী চিকিৎসকের উপর হামলা | ছবি: আজকের প্রসঙ্গ
![]() |
শরীয়তপুরের ডামুড্যায় নির্দিষ্ট একটি কোম্পানির ঔষধের নাম ব্যবস্থাপত্রে না লেখায় ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী চিকিৎসকের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার আওয়ামীলীগ নেতা, ছাত্রলীগ নেতা ও একটি ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধির বিরুদ্ধে।
অভিযুক্তরা হলেন, ডামুড্যা উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জুলহাস মাদবর(৫৫), তার ছেলে ডামুড্যা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি লিখন মাদবর(২১) এবং আওয়ামীলীগ নেতার ভাগ্নে ল্যাব এইড ফার্মাসিউটিক্যালস ঔষধ কোম্পানির মেডিক্যাল প্রোমোশন অফিসার শহিদুল ইসলাম মৃধা(৩০)।
হামলার শিকার আহত চিকিৎসক ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন নুসরাত তারিন তন্বী(৩২)।
জানা যায়, গত বুধবার(৩১ জানুয়ারি) রাতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশেই ঐ চিকিৎসকের বাড়ির সামনে তার উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চিকিৎসকের স্বামী মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার(০১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ডামুড্ড্যা থানায় মামলা করেন। পরে অভিযুক্ত জুলহাস ও শহিদুলকে ঐদিন দুপুরে পুলিশ আটক করে। এ ঘটনার পর আরেক অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা লিখন পলাতক রয়েছেন। ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি এমারত হোসেন আজকের প্রসঙ্গকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলা ও থানা সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন আগে ডাক্তারি প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম লেখানোর জন্য ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালস ঔষধ কোম্পানির কর্মী শহিদুল ইসলাম মৃধা ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন নুসরাত তারিন তন্বীর কাছে যান। এ সময় চিকিৎসক নুসরাত তার চাহিদামত ঐ কোম্পানির ওষুধ রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে লিখতে অস্বীকৃতি জানান। তখন তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
বুধবার রাতে ডামুড্যা বাজারের আলী আজম জেনারেল হাসপাতাল থেকে এক রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার পর তার বাড়ির সামনে পৌঁছালে চিকিৎসক নুসরাত হামলার শিকার হন। এসময় চিকিৎসক নুসরাতের ডাক-চিৎকারে বাসা থেকে তার মা মাসুমা খাতুন ও স্বামী মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া এগিয়ে আসলে তাদেরও আহত করা হয়। পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় চিকিৎসক নুসরাত ও তার মা মাসুমা খাতুনকে উদ্ধার করে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ডাক্তার নুসরাতের স্বামী মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ৩ জনের নাম উল্লেখ্য সহ অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামী করে ডামুড্যা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে জুলহাস ও শহিদুলকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে বিকালের দিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে । আরেক পলাতক আসামী জুলহাস এর ছেলে লিখন কে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, 'ল্যাবএইড ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি শহীদ ও স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি মিলে আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক তন্বীর উপরে হামলা চালিয়েছে। এতে তিনি আর তার মা আহত হয়েছেন। ডা. নুসরাতের পরিবারের কাছে শুনেছি কোম্পানির পছন্দমত ওষুধ প্রেসক্রাইব না করায় এই হামলা চালানো হয়েছে। একজন চিকিৎসক কখনোই চান না রোগীকে ভুল কিংবা অতিরিক্ত ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে।'
হামলার শিকার চিকিৎসক নুসরাতের স্বামী মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, 'ওরা চাচ্ছিলো ওদের কিছু মানহীন ঔষধ প্রেসক্রিপশনে লিখাতে, কিন্তু একজন চিকিৎসক হিসেবে সব কোম্পানির ঔষধ ঢালাওভাবে লেখার সুযোগ নেই। তাই আমার স্ত্রী তাদের কথায় রাজি হয়নি। ওরা স্থানীয় আর প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কাল রাতে আমার স্ত্রী ও আমাদের উপর হামলা চালায়। চিকিৎসকেরা চিকিৎসা সেবা দিতে গ্রামেগঞ্জে কাজ করে, এভাবে তাদের উপর হামলা হলে কেউ আর চিকিৎসাসেবা দিতে এখানে আসবে না। আমরা এই ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই।
বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে;র সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি শুনেছি ডামুড্যা উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জুলহাস মাদবর এক নারী চিকিৎসকের উপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে। আর তিনি এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, এটা যদি প্রমাণিত হয়। তাহলে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে দলীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।