জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ গুণী শিক্ষক নির্বাচিত হলেন সুলতানা রাজিয়া
রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪
২৭ জানুয়ারী ২০২৪, ৬:৫৯ অপরাহ্ণ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার, সুইজারল্যান্ড, মনপুরা, বটতলা, সিডনি ফিল্ড এর মতো অভ্যন্তরীন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থানগুলো দেখতে দূর দুরান্ত থেকে মানুষ আসলেও পাকুতলা নামের জায়গাটি আমরা কতজন চিনি?
সাভার থেকে ৬.৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই এর সবুজ গাছপালা, বিল ও শীতকালের অতিথি পাখির জন্য বিখ্যাত। তবে প্রায় ৭০০ একরের জায়গাটির গহিন এক কোনের “পাকুতলা” স্থানটির কথা অনেকেই জানেন না। ইটের বড় বড় দালানকোঠা গুলোর পিছে লুকিয়ে রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যের এই বিলাসটি। যার অস্তিত্ব নিয়ে অবগত নয় বহু শিক্ষার্থী, এমনকি স্থানীয় অটোওয়ালাদের জিজ্ঞাসা করলেও তারা পাকুতলায় যাওয়ার পথ বা মাধ্যম বলতে পারে না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন রেজিস্টার ভবনের ডান পাশ দিয়ে একটি সরু রাস্তা চলে গিয়েছে জঙ্গলের দিকে। পায়ে হেঁটে রাস্তাটি দিয়ে কিছুদুর সামনে এগুলেই নির্জন জায়গায় দেখা যায় মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে বিশাল এক পাকুড় গাছ। গাছটির বয়সের ছাপ রয়েছে এর আকারে ও ডালপালায়। কেউ কেউ মনে করে, গাছটির নিচে মানুষের সমাগম, আড্ডা ইত্যাদি কারণে জায়গাটি প্রথমে পরিচিতি লাভ করা শুরু করে। সময়ের সাথে সাথে স্থানটির নাম প্রচলিত হয় পাকুতলা নামে। তবে এই জায়গাটির একমাত্র সৌন্দর্য কিন্তু এই গাছটি নয়। গাছটির পাশ দিয়ে একটু আগলেই একপাশে দেখা যায় গোলাপি রঙের শাপলায় ভরা জলাশয়। অপরপাশের জলাশয়ের কচুরিপানায় খাবার খোঁজে বেড়াচ্ছে অতিথি পাখিরা। দুর থেকে দেখা যায় জনপ্রিয় লন্ডন ব্রিজ। এই দৃশ্যটি পুরোপুরি ভাবে উপভোগ করা যায় শুধুমাত্র শীতকালে যখন বিলের পানি শুকিয়ে চলাচলের রাস্তা তৈরি হয়। গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকালে সেই সরু পথটি পানির নিচে হারিয়ে যায়। দুই পাশের বিলের পানি একত্র হয়ে তখন বিশাল জলাশয়ে রূপ নেয়। প্রায় সারাবছরই শাপলা ফুল ফোটে এই জলাশয়ে। পাকুতলায় গেলে বাহারি রঙের শাপলা চোখে পড়ে সবচেয়ে বেশি।
সবুজ বনানী ঘেরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অতিথি পাখির অন্যতম অভয়ারণ্য পাকুতালা। শীতকালে বাহারি রঙের শাপলা ও অতিথি পাখির আনাগোনায় মুখোরিত থাকে এর পরিবেশ। পরিযায়ী পাখির নিরাপদ বাসস্থান ও খাদ্যের অন্যতম উৎস হলো পাকুতলা। তার সাথে মন মাতানো সবুজে ঘেরা পরিবেশ তো রয়েছেই। শীতের শুরুতেই হিমালয়ের পাদদেশ আর রাশিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে অতিথি বা পরিযায়ী পাখি আসতে থাকে এবং মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত তাদের আনাগোনা থাকে। ক্যাম্পাসে দৃশ্যমাণ কয়েকটা অতিথি পাখির জাত হলো- বালি হাঁস, লেঞ্জা হাঁস, বৈকাল হাঁস, গিরিয়া হাঁস, ধূসর রাজ হাঁস, চিতি হাঁস, লালশির, নীলশির, রাঙ্গামুরি ইত্যাদি। এছাড়া বছর জুড়ে বকের আনাগোনা তো থাকেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচুর মানুষের আনাগোনা হলেও অনেকেই পাকুতলা নামক জায়গা সম্পর্কে অবগত না হওয়ার কারণে এই স্থানে পাখির আনাগোনা একটু বেশি। পাকুতলার একপাশে নতুন কলাভবন ও অন্যপাশে প্রিতীলতা হল দৃশ্যমান। এছাড়াও সবুজে আবৃত মনোরম পরিবেশ তো আছেই। এখানে যদি যাওয়া হয় তাহলে মনে -হবে এ যেন এক অন্যরকম পরিবেশ। পানিতে ভাসমান বাহারি রঙের শাপলা, ও অন্যান্য বিভিন্ন জাতের জলজ উদ্ভিদ, অতিথি পাখি, ঘন গাছপালায়-আচ্ছাদিত বন-জঙ্গল, বাঁশ-ঝাড় সব মিলিয়ে এক অনাবিল সৌন্দর্য মণ্ডিত স্থান পাকুতলা।