মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

সৌখিন মৎস্যচাষি তুহিন এখন যুবকদের প্রেরণা


২৬ জানুয়ারী ২০২৪, ৭:২৭ অপরাহ্ণ 

সৌখিন মৎস্যচাষি তুহিন এখন যুবকদের প্রেরণা
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

চার বছর আগে পতিত জমিতে শখের বসেই মাছের ঘের গড়ে তুলেছিলেন। এরপর যেন আলাদীনের চেরাগের মতোই তা স্বপ্ন পূরণের সারথি হয়ে উঠে। চার বছর পরে আজ সেই মাছের ঘের যেন এক বিশাল মৎস্য সাম্রাজ্য। প্রায় ২২ একর জমিতে গড়া ছোট-বড় মিলিয়ে সাতটি মাছের এ ঘের থেকে এ বছর লাভ মিলেছে ১৯ লাখ টাকা। আর সাফল্যের এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আলফাডাঙ্গার বিদ্যাধর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা তাজমিন উর-রহমান তুহিন। এ সৌখিন মৎস্য খামারির সাফল্য দেখে এলাকার অনেকে এখন ভাগ্য ফেরাতে মৎস্য চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

মধুমতি নদীর ওপাড়ে নড়াইল জেলা আর এ পাড়ে ফরিদপুরের একেবারে শেষ সীমান্তের আলফাডাঙ্গা উপজেলা। সীমান্তবর্তী এ জনপদের মানুষের বড় অবলম্বন কৃষি। তবে বর্ষার পানি নিষ্কাশনের সুবিধা না থাকায় বেশির ভাগ জমিই এক ফসলি। দরিদ্র বর্গাদার কৃষকের বেশির ভাগই এ জন্য বছরের বেশির ভাগ সময় কিষান দিয়ে বা রিকশা-ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। এ অবস্থায় স্থানীয় যুবক তুহিন বিকল্প পন্থা হিসেবে এক ফসলি জমিতে গড়ে তুলেন মাছের ঘের। পড়াশুনা শেষ করে ঢাকায় গার্মেন্ট ব্যবসার পাশাপাশি অনেকটা শখের বসেই চার বছর আগে গড়ে তুলেন হজরত শাহ্ জালাল মৎস্য অ্যান্ড ডেইরি ফার্ম। এখান থেকে তিনি ধারণারও অতীত লাভের মুখ দেখছেন। সব মিলিয়ে একটি বহুমুখী খামারে রূপ নিয়েছে তার উদ্যোগ।

তুহিনের কাছে এ সাফল্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ জমিগুলো ছিল নিচু, এক ফসলি জমি। এখানে কৃষিকাজ করে লাভবান হতাম না। কৃষকেরাও জমি লিজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তখন আধুনিক পদ্ধতিতে কী করতে পারি সেই চিন্তা থেকে জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নিয়ে জমি খনন করে মাছের ঘের করি। আর ঘেরের চার পাশের উঁচু জমিতে কলা পেঁপে, সিম, বেগুনসহ নানান সবজি লাগাই। ফলদ গাছও রোপণ করি। এখন এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে সাতটি বড় ঘের রয়েছে। দেশী প্রজাতির রুই, মৃগেল, কাতল, পুঁটি ও গ্রাসকাপ জাতীয় মাছের চাষ হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য দফতর সহায়তা করছে এ কাজে।

তুহিন জানান, গত অর্থবছরে খামার থেকে তার প্রায় ১৯ লাখ টাকা আয় হয়েছে। তা থেকে সরকারি খাতে ৫৭ হাজার টাকার উৎস কর দিয়েছেন। স্থানীয় পর্যায়ে আমিষের ঘাটতি মিটিয়ে যাতে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন সেটিই তার লক্ষ্য বলে জানান তিনি। মাছের ঘেরের সাফল্যের পর তাজমিন বাড়ির পাশে গড়ে তুলেছেন গরুর খামার ও বায়োগ্যাস প্লান্ট। নতুন করে আরো দু’টি ঘের বাড়ানোরও উদ্যোগ নিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, এ ঘের হওয়ায় তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। তার দেখাদেখি অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন মাছ চাষে।

পাশের মালা গ্রামের তাইজুল ইসলাম টিটন বলেন, আমি তার এ উদ্যোগ দেখে পাঁচ একর জমিতে মাছের ঘের করি। পাশাপাশি পাড় দিয়ে সবজি লাগাই। এ বছর আমি এক লাখ টাকার শুধু লাউ-ই বিক্রি করেছি। আর মাছ বিক্রি করেছি ১১ লাখ টাকার।

স্থানীয় মেম্বার সৈয়দ শরিফুল ইসলাম বলেন, এ জমিতে এক সময় কিছু হতো না বললেই চলে। তবে এখন এই ঘের করায় যেমন এর মালিকেরা লাভবান হচ্ছেন, তেমনি গ্রামবাসীও উপকৃত হচ্ছেন। এখানে অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। অনেকে বিনামূল্যে মাছ ধরে পরিবারের চাহিদা মেটাচ্ছেন। তিনি তুহিনের নানা সমাজকল্যাণ কাজের বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, এ ঘেরের মুনাফার বেশির ভাগ তিনি গ্রামের মানুষের সাহায্যে ব্যয় করেন। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তিনি খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন। প্রশাসনের মাধ্যমে একজন ক্ষতিগ্রস্ত বৃদ্ধাকে ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। পথচারীদের বিশ্রামের জন্য বিশ্রামাগার করে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম লুৎফর রহমান বলেন, তানজিম উর রহমান তুহিন প্রায় ২২ একর জমির ওপরে যে মাছের ঘের গড়ে তুলেছেন, সেটি খুবই ভালো একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। আমরা নতুনভাবে যারা মৎস্য চাষের প্রশিক্ষণ নিতে আসেন তাদের সেখানে নিয়ে সরেজমিন প্রশিক্ষণ দেই। তিনি একজন সফল মৎস্যচাষি হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। আমরা তাকে সব ধরনের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা করছি।