শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪

ছাত্রলীগের অনুরোধে রাবিতে ডাইনিংয়ে খাবারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত


১২ জানুয়ারী ২০২৪, ৩:৩৯ অপরাহ্ণ 

ছাত্রলীগের অনুরোধে রাবিতে ডাইনিংয়ে খাবারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত
  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ১৭ টি আবাসিক হলের ডাইনিংয়ে খাবারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে দাবি করেন উপাচার্য তাদের অনুরোধে ডাইনিংয়ে খাবারের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন।

গত ১২ ডিসেম্বর প্রাধ্যক্ষ পরিষদের এক সভায় খাবারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে তা তখন বাস্তবায়ন করা হয়নি। তার আগেই বিষয়টি জানাজানি হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের মিটিংয়ে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত  নিয়েছিলাম। পরবর্তীতে সেটি উপাচার্য স্যার তা অনুমোদনও দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে গতকাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে  একটি জরুরি মিটিং ডাকা হয়। সেখানে খাবারের দাম আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদ ও  ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলের ডাইনিংয়ে দুপুর ও রাতের খাবার সরবরাহ করা হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও খাবারের মান বাড়ানোর কথা বলে ২০২২ সালের ১ জুলাই দুই বেলার খাবারে মোট ৮ টাকা বাড়ায় প্রশাসন। গত ১২ ডিসেম্বর প্রাধ্যক্ষ পরিষদের এক সভায় ফের খাবারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব হলের ডাইনিংয়ে দুপুরের খাবারের দাম ৩৫ টাকা এবং রাতের খাবারের দাম ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

খাবারের দাম বাড়ানোর বিষয়টি বুধাবার সকালে জানাজানি হয়। প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সিদ্ধান্তটির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর  প্ল্যাটফর্ম ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামের গ্রুপে তাঁরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

ওই দিন দুপুর পৌনে দুইটার দিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে খাবারের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি আপাতত স্থগিত করার অনুরোধ জানান। অন্যথায় ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এসময় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হবে বলে আশ্বস্থ করেন।

এ সময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম, অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে উপস্থিত ছিলেন।

দুপুরে দুইটার দিকে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওই ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করে জানান, খাবারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে খাবারের মান ও মূল্য নির্ধারণ করবে। ছাত্রলীগের অনুরোধ রাখায় তিনি উপাচার্যকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁরা আন্দোলনে নামতে পারে ভেবে আমরা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করি। আমরা প্রশাসনকে সিদ্ধান্তটি স্থগিত করার অনুরোধ জানাই। তাঁরা এই সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে আমরাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে নামবো বলে জানাই৷ পরে প্রশাসন দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি স্থগিত করা হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করে। এরপর আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি শিক্ষার্থীদের অবহিত করি যেন তারা আন্দোলন না নামে।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতারা দেখা করার পর পৌনে তিনটার দিকে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সঙ্গে জরুরি সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সভায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে। এ ছাড়া বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা অংশ নেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দুইটার পরে জানানো হয় পৌনে তিনটায় জরুরি সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সভায় খাবারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুরোধে খাবারের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করা হয়।

ছাত্রলীগ নেতার ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, বিষয়টি আমি প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেছিলাম। তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এটি ছাত্রলীগ নেতা ঠিক করেনি।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, খাবারের দাম নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের বৈঠকে। এর আগে কেউ কিভাবে পোস্ট করলো সেটা আমাদের জানার বিষয় না। উপাচার্যের সঙ্গে দেখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আনঅফিশিয়াল বিষয়টি পাবলিক করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।