সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫

স্বপ্নের প্রশাসন ক্যাডারের ফল ঘোষনার আগেই হার্ট এ্যাটাকে মেধাবী পল্লবের মৃত্যু


সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন ৪০ ও ৪১ তম বিসিএসেও।

২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ৬:৩৯ অপরাহ্ণ 

স্বপ্নের প্রশাসন ক্যাডারের ফল ঘোষনার আগেই হার্ট এ্যাটাকে মেধাবী পল্লবের মৃত্যু

পল্লব বসু বাপ্পি | ছবি: আজকের প্রসঙ্গ

  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

শামীম হাসান, বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা সদরের মৃত দেবু প্রসাদ বসুর ছেলে পল্লব বসু বাপ্পি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরবর্তীতে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। ৪০ তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ পেয়ে ভোলার লালমোহন কলেজে অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন।

৪১তম বিসিএসে ফুড ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল প্রশাসন ক্যাডারে চাকুরী করার। সেই লক্ষে চেষ্টাও করেছেন। সবশেষ ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত ৪৩ তম বিসিএসের ফলাফলে তিনি প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। কিন্তু এই ফল দেখে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি তার। কারণ এর সাত দিন আগে ২০ ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার। অদম্য এই যুবকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে। সেই শোককে আরও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে ৪৩ তম বিসিএসের ফল। বাপ্পির মৃত্যু ও সাফল্য যেন এক সাথে গাথা। কোন ভাবেই তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা।

পরিবার সূত্রে জানাযায়, গত ২০ ডিসেম্বর নতুন বাড়ির কাজ শুরু করার জন্য ইট বালু ও রড রেডি করেন। রাতে ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়ে বুকে ব্যথা অনুভব করেন। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পল্লবকে আর বাঁচানো যায়নি।

পল্লব বসুর মা কল্পনা বসু বলেন, ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে দুই ভাই বোনকে লেখাপড়া  শিখিয়েছি। আমার ছেলে সারা জীবন ভালো রেজাল্ট করেছে। স্বপ্ন ছিল প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার। পল্লবের স্বপ্ন পুরন হল, কিন্তু ওহ দেখে যেতে পারল না। ভগবান আমার বুকের ধনকে নিয়ে গেল।

সন্তান হারা মা আরও বলেন, আমাদের বসত ঘরটি খুব ভাল না। ছেলে চেয়েছিল ডুপ্লেক্স বাড়ি করতে। বাড়ি করার জন্য সবকিছু রেডি করেছে এর মধ্যেই তার মৃত্যু হল। আমার সব পড়ে আছে শুধু আমার ছেলে নেই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন পল্লবের মা।

পল্লব বসুর প্রতিবেশী জাহিদুল ইসলাম বুলু বলেন, পল্লবের মৃত্যু আমাদের খুবই কষ্ট দিয়েছে। আসলে এমন মৃত্যু আমরা প্রতিবেশী হয়ে মেনে নিতে পারছি না। আর তার পরিবার কিভাবে নেবে। ৪৩ তম বিসিএসের ফল ওর মা যখন জেনেছে তখন থেকেই তিনি স্বাভাবিক নেই। পাগলের মত হয়ে গেছেন, তিনি শুধুই কান্না করছেন। তার দুঃখ যেন আরো বেড়ে গেল।

পল্লবের আরেক প্রতিবেশী তুহিন খান বলেন, পল্লবের অর্জনে আমরা সবসময় গর্ব করেছি। সে তিনবার বিসিএস দিয়েছে। প্রতিবার তার রেজাল্ট ভালো হয়েছে। ব্যক্তি হিসেবে সে অত্যন্ত ভালো ছিল। মৃত্যুর আগে পল্লব বাড়িতে এসেছিল ডুপ্লেক্স বাড়ির কাজ শুরু করার জন্য। বাড়ির সামনের জায়গাতে পল্লব একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি করতে চেয়েছিল। বাড়ির জন্য ইট বালু রেডি করেছিল। সবকিছু সেভাবেই পড়ে আছে শুধু পল্লব নেই।