খুকৃবিতে ভেটেরিনারি অনুষদের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষা সফর
রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৭ অপরাহ্ণ
দেশের হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় রোগীদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে হার্টের রিং। একই সঙ্গে হার্টের ব্লকের মাপমতো রিং না মেলায় অনেক রোগীকে হাসপাতাল থেকে ফেরত যেতে হচ্ছে। এতে হাসপাতালগুলোতে কমেছে রিং পরানোর হার।
গত ১২ ডিসেম্বর দেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর করোনারি স্টেন্টের (হার্টের রিং) নতুন মূল্য নির্ধারণ করার পর থেকে হাসপাতালগুলোতে ১০ দিন ধরে রিং সরবরাহ বন্ধ রেখেছে ২৪টি আমদানিকারক ও সরবরাহকারক। এতে এই সংকট তৈরি হয়েছে। এখন সরবরাহ আছে তিন কোম্পানির রিং।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু কোম্পানি তাদের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে অনেক সময় ব্লকের আকার অনুযায়ী রিং মেলানো যাচ্ছে না।
এ পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে সরকারের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে আমদানিকারক ও সরবরাহকারকদের সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়োজন। কিন্তু ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এই ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
গতকাল মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ ইউসূফ বলেন, আমি মনে করি না যে দুর্ভোগ আছে। কার্ডিয়াক স্পেশালিস্টরা বলেছেন কোনো দুর্ভোগ নেই। দুর্ভোগ হলে তাঁরা আমাদের জানাবেন। আমরা তখন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। তাঁরা যদি মনে করেন সমস্যা হচ্ছে, তাহলে তাঁরা নিজেরাই চলে আসবেন আমাদের কাছে।
তিনি বলেন, এর আগে দাম নির্ধারণের দিন ১৩ জনের মধ্যে ছয়জন উপস্থিত ছিলেন। নতুন করে দাম নির্ধারণে জাতীয় কমিটির ১৩ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে আলোচনার তারিখ জানানো হবে।
মেডিক্যাল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওয়াসিম আহমদ বলেন, রোগীদের দুর্ভোগের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। এ বিষয়ে আমরা দ্রুত সমাধান চাইলেও ঔষধ প্রশাসন মনে হয় চায় না। তারা বলেছে, নির্বাচনের পর ব্যবস্থা নেবে।
গতকাল মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ও হার্ট ফাউন্ডেশনে আসা রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে থাকা তিন কোম্পানির হার্টের রিং অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় বেশি। এ ছাড়া সব ধরনের রিং না থাকায় বাধ্য হয়ে বেশি মূল্যের রিং কিনতে হচ্ছে তাদের। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছে দরিদ্র রোগীরা। বাধ্য হয়ে রিং না পরিয়েই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের।
হার্ট ফাউন্ডেশনের একজন চিকিৎসক জানান, সরবরাহ বন্ধ করার পর থেকে রোগী ফেরত যাচ্ছে। আগে দিনে ৩৫ থেকে ৪০টি রিং পরানো হতো, এখন গড়ে ২৫টিতে নেমে এসেছে। এর একমাত্র কারণ রিংয়ের সাইজ মিলছে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ২০টি হার্টের রিং পরানো হতো। সরবরাহ বন্ধের পর থেকে তা ১০টিতে নেমে এসেছে। যাদের বেশি জরুরি, তারা বেশি দাম হলেও রিং পরাচ্ছে। কিন্তু দরিদ্র রোগীদের ক্ষেত্রে তা বহন করার মতো না হওয়ায় ফেরত যাচ্ছে।
বিএসএমএমইউয়ের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক ও মূল্য নির্ধারণী কমিটির সদস্য ডা. এস এম মোস্তফা জামান বলেন, হঠাৎ করে বেশ কিছু কোম্পানি যেহেতু তাদের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, সে কারণে অনেক সময় ব্লকের সাইজ অনুযায়ী রিং মেলানো যাচ্ছে না। যত দ্রুত সম্ভব এ পরিস্থিতি আমরা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে চাই। ঔষধ প্রশাসনকে দায়িত্ব নিয়ে এ ব্যাপারে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও হাসপাতালসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবহৃত হচ্ছে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের তিন কোম্পানির রিং। দেশে হার্টের রিংয়ের নতুন খুচরা মূল্য ১২ ডিসেম্বর নির্ধারণ করে ঔষধ প্রশাসন। কিন্তু এই নতুন দাম নিয়ে আপত্তি জানায় ইউরোপীয় রিং আমদানিকারক ও সরবরাহকারীরা। ১৬ ডিসেম্বর থেকে তারা হাসপাতালে রিং সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবহৃত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তিন কোম্পানির রিং। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ২০ থেকে ৪০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের রিং। অন্য কোম্পানির রিং সরবরাহ বন্ধ থাকায় রোগীর ব্লকের মাপ অনুযায়ী এসব রিং পাওয়া যাচ্ছে না।
ভারতের চেয়ে তিন গুণ বেশি দাম নির্ধারণ করার যৌক্তিকতার বিষয়ে জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসূফ বলেন, ভারতে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় রিংয়ের ব্যবহার বেশি হয়। এতে আমদানিও বেশি। এ জন্য রিংয়ের খরচও অনেক কম।
রিংয়ের দাম সমন্বয় হলে দেশে সব ধরনের হার্টের রিং সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকায় দেওয়ার আশ্বাস দেন মেডিক্যাল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওয়াসিম আহমদ। তিনি বলেন, সব কোম্পানিকে এই দামে রিং বিক্রি করতে হবে। এটি সমন্বয় করবে ঔষধ প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি থেকে যারা আমদানি করছে, তারা শুধু তাদের মার্কআপ ফর্মুলা দিয়েছে। আমাদের ক্ষেত্রে সেটি করা হয়নি।
রিংয়ের মূল্যবৃদ্ধির দাবির পক্ষে থাকা আমদানিকারক ও সরবরাহকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের একাংশ জানিয়েছে, সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে হাসপাতালে থাকা রিং ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তারা বলছে, আবার দাম নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত তারা সরবরাহ বন্ধ রাখবে।