শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

হাতুড়ে ডাক্তারের গ্যাঁরাকলে মহিপুরের চিকিৎসা সেবা


প্রতারিত হচ্ছেন সাধারন রোগীরা

২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ৪:৪২ অপরাহ্ণ 

হাতুড়ে ডাক্তারের গ্যাঁরাকলে মহিপুরের চিকিৎসা সেবা

গ্রীণ লাইফ ডায়াগনষ্টিক | ছবি: আজকের প্রসঙ্গ

  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা ডাক্তারি কোনো সার্টিফিকেট নেই। তারপরও বছরের পর বছর করছেন জটিল রোগের চিকিৎসা। রোগী আসলেই দিচ্ছেন নানান টেষ্ট। আবার এসব টেষ্ট করানো হয় চিকিৎসকের পছন্দের গ্রীণ লাইফ ডায়াগনষ্টিক সেন্টার নামের একটি ল্যাবে। এমন অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালীর মহিপুরের তানভীর মেডিকেল ফার্মেসীর সত্ত্বাধিকারী মনিরুল আলম  মামুনের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মহিপুর বাজারের বড় মসজিদের সামনে অবস্থিত তানভীর মেডিকেল। এই মেডিকেলে যে কোন রোগী ঔষধ কিনতে আসলেই দেয়া হয় টেষ্ট। আবার এসব টেষ্ট করানো হয় গ্রীণ লাইফ ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে। এভাবে বেশ কয়েকজন রোগী ওই ল্যাবে টেষ্ট করিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। এমবিবিএস ডাক্তার না হয়েও কথিত ডাক্তার সেজে এভাবে টেষ্ট দেয়ায় জনমনে উঠেছে নানা প্রশ্ন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থেকে কমিশন পাওয়ার আশায় এমন অনৈতিক কাজ করছে ফার্মাসিষ্ট মনিরুল আলম মামুন। ভুক্তভোগী মহিপুরের ইউসুফপুর গ্রামের বেল্লাল হোসেন জানান, তিনি অসুস্থবোধ করলে মহিপুর ফার্মেসী ব্যবসায়ী মনিরুল আলম মামুনের কাছে চিকিৎসার জন্য যান। তিনি ভিডাল ,সিবিসি, ডেঙ্গু পরীক্ষা দেন তার নির্দেশ মোতাবেক মহিপুর গ্রীণলাইফ ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করান। সেই রিপোর্ট নিয়ে পুনরায় ফার্মেসী ব্যবসায়ীর কাছে গেলে তিনি রিপোর্ট দেখে এন্টিবায়োটিক সহ কিছু ওষুধ দেন। তার চিকিৎসা নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় মহিপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডাঃ হাসিবুল ইসলাম নাহিদের কাছে গেলে তিনি সকল ওষুধ পরিবর্তন করে দেন।

তিনি বলেন আমাকে ফার্মেসী ব্যবসায়ী যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ দিয়েছিল তাতে আমার বড়ধরনের ক্ষতি হতে পারত। তার কাছে গিয়ে আমি প্রতারনার শিকার হয়েছি। মনিরুল আলম  মামুন এবং ওই ডায়াগনষ্টিকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানাচ্ছি।

মনির মেডিকেল হল

এ বিষয়ে ফার্মেসী ব্যবসায়ী মনিরুল আলম মামুনের কাছে জানতে চাইলে টেস্ট ও হায়ার এন্টিবায়োটিক দিতে পারেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের টেস্ট দেয়ার আইনগত অধিকার নাই। কিন্তু মানবিক কারণে দিয়ে থাকি। গ্রীণ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক মামুন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। পরে জানাবেন বলে জানান।

গ্রীন লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দায়িত্ব প্রাপ্ত মেহেদী হাসান সুমন এ বিষয় তথ্য সংগ্রহ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে দেখে নেয়ার হুমকি সহ সাংবদিকদের পেশার উপর আঘাত করে কথা বলেন।

কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট'র মহিপুর থানা সভাপতি রুহুল আমিন দুলাল বলেন, ফার্মেসি মামুনের বিরদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

এ বিষয়ে মহিপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডাঃ হাসিবুল ইসলাম নাহিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, শুধু এ রোগী না ইতিপূর্বেও গিয়াসউদ্দিন ,আবুল কাশেম সহ একাধিক রোগী ফার্মেসী ব্যবসায়ী মনিরুল আলম মামুনের এ রকম টেষ্ট ও প্রেসক্রিপশন নিয়ে তার কাছে  অসুস্থ অবস্থায় আসেন। তার চিকিৎসায় রোগী সুস্থ তো দুরের কথা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি আরো বলেন, এমবিবিএস ডাক্তার ছাড়া অন্য কেউ এরকম টেষ্ট ও ওষুধ দিতে পারেন না এবং কোন ডায়াগনোষ্টইক ল্যাবের এ রকম টেষ্ট করার কোন প্রকার অনুমতি নেই।

পটুয়াখালী সিভিল সার্জন হুমায়ুন কবির বলেন, ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা কোন ধরনের টেস্ট দিতে পারবে না। তাদের দেওয়া টেস্ট কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি আমার জানা নেই। এই অপচিকিৎসা বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।