রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪
নির্মলেন্দু গুণ

আই লাভ ইউ- পর্ব ৩


কবি নির্মলেন্দু গুণ এর নতুন উপন্যাস আই লাভ ইউ। সত্তর দশকে কলকাতার মেয়ে মৈত্রেয়ী রায়ের প্রেমে পড়েছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। ৫০ বছর পর, সেই স্মৃতি মনে করে বর্তমানে আই লাভ ইউ নামে আত্মজৈবনিক এক প্রেমের উপন্যাস লিখছেন কবি। ফেসবুকে এখন পর্যন্ত উপন্যাসটির ৩৪ পর্ব লিখেছেন। সেই উপন্যাসের কিছু অংশ তিনটি আলাদা পর্বে প্রকাশ করা হলো এখানে। আজ ৩য় পর্ব

৮ জুলাই ২০২৪, ৪:৫৩ অপরাহ্ণ 

আই লাভ ইউ- পর্ব ৩

ছবি/প্রথম আলো |

  গুগল নিউজে ফলো করে আজকের প্রসঙ্গ এর সাথে থাকুন

আমি বেশ বুঝতে পারলাম, সুচিত্রাকে সরিয়ে দিয়ে মৈত্রেয়ী আমার আত্মার ভেতরে ক্রমশ আসন পেতে বসেছে। তার প্রেমের বন্ধন থেকে আমার মুক্তি নেই।

আমি মৈত্রেয়ীর সঙ্গে প্রেম করতে চেয়েছিলাম। কবিতা লিখে মৈত্রেয়ীকে মুগ্ধ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু মৈত্রেয়ীর প্রেম যে আমার সত্তাকে এভাবে গ্রাস করে নিজের অস্তিত্বকে প্রকাশ করবে, আমাকে ‘তুমি’তে পরিণত করবে, সে কথা আমার ভাবনার মধ্যে ছিল না।

দুদিন আগেও যাকে আমি দেখিনি, যার সঙ্গে আমার কোনো পূর্বপরিচয় ছিল না, এক দিনের ব্যবধানে আমার সব অস্তিত্ব সেই নারীর মধ্যে লীন হয়ে যাবে?

কম ভালোবেসে সে কি আমার সব ভালোবাসাকে দখল করে নিচ্ছে? নাকি কম ভালোবেসে আমিই মৈত্রেয়ীর সব ভালোবাসাকে নিজের সম্পদ করে নিয়েছি?

ভাবতে ভাবতে রণে ভঙ্গ দিয়ে আমি আমার মেসের পথ ধরলাম।

মেসে ফিরে মনে হলো, আমার গভীর রাতে হঠাৎ বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি কেউ লক্ষই করেনি। লক্ষ করলেও বিষয়টি কেউ আমলে নেয়নি। এ রকম গভীর রাতে মেসের বাইরে আমি আগেও গিয়েছি।

কবিরা তো এ রকমই হয়।

ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমি একটা ছোট্ট মজার কবিতা লিখলাম। কবিতার নাম দিলাম ‘তুমির ক্রমবিকাশ’:

‘আমি। আমি। আমি।

আমি। আমি। তুমি।

আমি। তুমি। তুমি।

তুমি। তুমি। তুমি।’

তুমির ক্রমবিকাশকে বোঝাতে গিয়ে এই কবিতায় ছয়বার আমি ও ছয়বার তুমি ব্যবহার করেছি।

আমি আর তুমি এখানে সমান সমান।

প্রেম মনে হয় এ রকমই কিছু হবে। আমাদের পূর্বপুরুষ ও পূর্বনারীরা একটা দারুণ জিনিস আবিষ্কার করেছেন—প্রেম। এই প্রেমকে মহিমামণ্ডিত করেছেন আমাদের আদি কবিরা। রাধা–কৃষ্ণের প্রেমকথা শুধু ভারতবর্ষকেই আলোকিত করেনি, পুরো পৃথিবীতেই আলো ছড়িয়েছে।

‘কৃষ্ণ বলে আমার রাধা বামে যতক্ষণ, নইলে শূন্য জীবন।

নইলে শূন্য জীবন।’

 (প্রথম আলো থেকে)