উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী কুবি শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছেন মেরী
বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪
১৩ নভেম্বর ২০২৩, ১:২৬ অপরাহ্ণ
বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক হুমায়ূন আহমেদ। কালজয়ী এই কথাসাহিত্যিকের আজ সোমবার (১৩ নেভেম্বর) ৭৫ তম জন্মদিন। তার জীবনের অনেক গল্পই এখনও অজানা রয়েছে। লেট নাইনটিজের দিকে মুক্তি ক্লিনিকে হুমায়ূন আহমেদকে প্রচুর যেতে হয়েছে। ছিয়ানব্বই থেকে নিরানব্বইতে, প্রায়ই রোগিদের কাউন্সিলিং করতে তার যেতে হতো। লোকজন হিমু হয়ে গেছে, এমন লোকেদেরও ওই হাসপাতালে এনে ভর্তি করানো হইতো। হুমায়ূন আহমেদের অনেক অজানা কথা জানিয়েছিলেন তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন।
হুমায়ূন আহমেদ ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন খুব সৌখিন এবং আমুদে। তিনি সবসময় ফুল হাতা শার্ট পরে ঘুমাতেন। ঘুমানোর পোশাক হিসেবে হুমায়ূনের পছন্দ ছিল নতুন শার্ট। নতুন শার্ট না থাকলে লন্ড্রি থেকে ইস্ত্রী করা শার্ট পরে ঘুমানো ছিল তার অভ্যাস। তিনি দুইটা গালি ব্যবহার করতেন। প্রথমটা হলো ফাজিল, দ্বিতীয়টি হলো ফাজিলের ফাজিল। এই গালি অবশ্য নাটকেও ব্যবহার হতে দেখা গেছে। শাওনকে বিয়ের পর লেখকের পোশাক আশাকে একটু পরিবর্তন দেখা গেছে। তিনি প্রথম জিন্স পরা শুরু করেন তখন থেকে। হুমায়ূন আহমেদ ও তার মায়ের একই দিনে একই হাসপাতালে বাইপাস সার্জারি হয়। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে প্রথমে হুমায়ুন আহমেদের সার্জারি হয়, তারপরে তার মায়ের। বড় ছেলে নুহাশ এবং হুমায়ূন আহমেদের প্যান্টের সাইজ একই ছিল। শীত এবং গরম সারাবছর তিনি গরম পানিতে গোসল করতেন। নব্বই দশকের শেষ দিকে মুক্তি ক্লিনিকে হুমায়ূন আহমেদকে অনেকবার যেতে হয়েছে। ছিয়ানব্বই থেকে নিরানব্বইতে, প্রায়ই রোগিদের কাউন্সিলিং করতে তার যেতে হতো। লোকজন হিমু হয়ে গেছে, এমন লোকেদেরও ওই হাসপাতালে এনে ভর্তি করানো হইতো। তার বাসায় কোন তালা-চাবি ছিল না। লেখক নিজের বাড়িতে কোনদিন তালা দেননি।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কথা দুই যুগ আগেও মানুষ জানতো না। হুমায়ূন আহমেদই প্রথম এই দ্বীপের কথা জানিয়েছেন। নব্বই দশকে হুমায়ূন আহমেদ লিখলেন নতুন উপন্যাস ‘রূপালী দ্বীপ’। এ উপন্যাসের মাধ্যমে পরিচিতি পেল দেশের সর্বদক্ষিণ-পূর্ব সীমানা টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিন দ্বীপ।
অবহেলিত অনেক জনকে তিনি সমাজে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে তিনি নেত্রকোনা অঞ্চলের মালজোড়া বাউল গানের বিশিষ্ট গায়ক ও গীতিকারদের নতুনভাবে আবিষ্কার করেন। মরমি সাধক রশিদ উদ্দিন, উকিল মুন্সী, জালাল উদ্দিন খাঁ, সিলেট অঞ্চলের হাছন রাজাসহ অনেকের সৃষ্টির সঙ্গে তার ছিল নিবিড় সংযোগ।
আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারের উদ্দেশ্যে শিক্ষা সচেতনতামূলক একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করেন হুমায়ূন আহমেদ। সে সময়ে তিনি বিজ্ঞাপনটিতে কন্ঠ দেওয়ান কুদ্দুস বয়াতিকে। কুদ্দুস বয়াতি তখন নেত্রকোনা রেল স্টেশনে গান গেয়ে গেয়ে বেড়াতো।
বিটিভির অডিশনে বাদ পড়ে আফজাল শরীফ। বাদ পড়ে মন খারাপ করে রামপুরার টেলিভিশন ভবনের আশেপাশে ঘুরতে লাগলেন। তার ওপর চোখ পড়লো হুমায়ূন আহমেদের। আর তাতেই বদলে গেল তার জীবনের হিসেব।
ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি মানুষকে আনন্দ বিলিয়ে আনন্দ পেতেন। সবসময় এক অন্যরকম ক্ষুধা তার মধ্যে পরিলক্ষিত ছিল- অন্যকে আনন্দ দিয়ে তিনি আনন্দিত হতেন। যতক্ষণ না তা করতে পারতেন ঠিক ততক্ষণ কেবলি ছটফট করতেন।
জীবদ্দশায় তিনি ক্লাবের সদস্যদের কুলখানি খাইয়েছিলেন। সেবার হুমায়ূন আহমেদের শরীরটা ভেঙে পড়েছিল, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়ে কেবল বাসায় ফিরেছেন। সবাই উৎকন্ঠিত লেখকের ক্যান্সার নিয়ে। কিন্তু পরেরদিন ক্লাবের আড্ডায় হুমায়ূন আহমেদের কাছে হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়ায় এই ক্যান্সার।
ক্যান্সারের চেয়ে হাস্যকর কোনো কিছু যেন পৃথিবীতে আর নেই। সবাইকে পরদিনের জন্য নিমন্ত্রণ জানান হুমায়ূন আহমেদ, কুলখানির নিমন্ত্রণ। পৃথিবীতে তিনি একজন মানুষই ছিলেন, যিনি বন্ধু-স্বজন-অনুরাগীদের নিজের কুলখানি খাইয়ে গেছেন।